রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ: নওগাঁর মান্দায় ২৬ বছর আগে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আজিম উদ্দিন হত্যা মামলার রায়ে ২৬ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. মোখলেছুর রহমান এ রায় দেন। রায় শুনানির সময় ২২ জন আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি চারজন পলাতক। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন আইনজীবী শামসুর রহমান এবং আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী রফিকুল ইসলাম (১)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর সকালে জেলার মান্দা উপজেলার ভরট্ট শিবনগর গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আজিম উদ্দিনকে (৫৫) প্রতিপক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা ও হাসুয়া নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ঘটনার দিন দুপুরে নিহতের ছেলে আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলা তদন্ত শেষে ৩৪ জন আসামির নাম উল্লেখ করে বিচারের জন্য আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এরমধ্যে ওই মামলার ৮ জন আসামির মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সোমবার দুপুরে বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ও ৩৪ ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২৬ জন আসামির বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এছাড়া প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
দণ্ডপাপ্ত আসামিরা হলেন- মনছুর আলী, আলতাব হোসেন মন্ডল, এনামুল হক, দেলোয়ার হোসেন, ফজের আলী, ফজলুর রহমান, কাদের আলী, জবেদ আলী, কাজেমুদ্দিন, অহিদুল ইসলাম (রহিদুল), আছিব উদ্দিন, আনিছার রহমান, মোখলেছুর রহমান, কাশেম আলী মন্ডল, লিয়াকত আলী প্রামানিক, মোখলেছুর রহমান, জালাল, মোজাফ্ফর আলী, শাহাজাহান, ছাইদুর রহমান, পৈক্যা (বুলু), আজাদ আলী মৃধা, আশরাফুল মৃধা, কলিমুদ্দিন মন্ডল, পটল ওরফে পরশ উল্যা প্রামানিক এবং গুল মাসুদ ওরফে কালু।
আদালত ও মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভরট্ট শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা আজিমুদ্দিন গ্রামের মসজিদের নামে থাকা জমি লিজ নিয়ে ভোগদখল করতেন। সেই জমি নিয়ে আজিমুদ্দিনের সঙ্গে একই গ্রামের বাসিন্দা মনসুর আলী, শাহজাহান আলী ও আলতাব হোসেন মণ্ডলের বিরোধ ছিল। ১৯৯৮ সালের ২ ডিসেম্বর সকাল ছয়টার দিকে মনসুর আলী, শাহজাহান আলী ও আলতাব হোসেন মণ্ডল লোকজন নিয়ে আজিমুদ্দিনের ভোগদখল করা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে যান। এ সময় আজিমুদ্দিন তাঁদের বাধা দিতে গেলে মনসুর আলী, শাহজাহান আলী, আলতাব হোসেন ও তাঁদের সহযোগীরা লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর শরীর ও মাথায় আঘাত করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় আজিমুদ্দিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আজিমুদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন বাদী হয়ে মান্দা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৯৯৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আদালতে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আট আসামির মৃত্যু হওয়ায় তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হয়। ফলে পরবর্তীকালে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চলমান থাকে। ১২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে দীর্ঘ ২৬ বছর পর সোমবার দুপুরে মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়।
এদের মধ্যে চারজন আসামি মোখলেছুর রহমান, এনামুল হক, আনিছুর রহমান ও মোজাহার পলাতক রয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শামসুর রহমান বলেন, ১৯৯৮ সালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। দীর্ঘ ২৬ বছর পর ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচার পেয়েছে। আর এ বিচারের মাধ্যমে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে।