সর্বশেষ সংবাদ :

সোনামসজিদ বন্দরে পানামার কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, শিবগঞ্জ: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সরকারী অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে আমদানীকারক ও স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। রোববার দুপুরে সোনামসজিদ স্থলবন্দর জিরো পয়েন্টে এনিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। পরে আমদানীকারক গ্রুপের মিলনায়তনে এক প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বন্দরের ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে হুমকীর মূখে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হলেও তাদের সেবা দেয়া হয়না। এছাড়া অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রতিবাদ করায় তাদের প্রশাসনের মাধ্যমে হুমকী ও ভয়ভীতি প্রদর্শনেরও অভিযোগ করেন বক্তারা।
পরে সোনামসজিদ আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলেন করেন স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ অভিযোগ করেন, ২০১৯ সাল থেকে হঠাৎ ৭৮৩ টাকার পরিবর্তে প্রায় ৮ হাজার টাকা মাশুল আদায় শুরু করে সোনামসজিদ পানামা পোট লিংক লিমিডেট। এছাড়া এসব অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা না করে পানামা পোর্টের ব্যক্তিগত একাউন্টে জমার অভিযোগ করেন তারা। ফলে গত দেড় যুগে সরকারকে ফাঁকি দিয়ে কয়েক’শ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
তাদের দাবী চুক্তি মোতাবেক বন্দর থেকে অর্জিত অর্থ সরকার ৪৯ ভাগ এবং পানামা ৫১ ভাগ পাবার কথা।কিন্তু পানামা কর্তপক্ষ সব টাকায় নিজেদের নামে সংগ্রহ করে সরকারকে যেনতেনভাবে অর্থ প্রদান করে ফাঁকি দিচ্ছে। আর লুটপাটের এসব টাকা স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিভিন্ন সংস্থা, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভাগবাটোয়ারা হয়ে আসছে। এ নিয়ে বারবার অভিযোগ করেও তারা এর প্রতিকার না পাওয়ায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব অনিয়মের সুষ্ঠ তদন্ত দাবী করেন।
আমদানীকারকদের দাবী তাদের বন্দর কর্তপক্ষ বিভিন্নভাবে উচ্চ মাসুল নেয়ার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ লুটপাট করলেও বন্দরে কোন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেনা।
ব্যবসায়ীদের দাবী স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ কারণে ব্যহত হচ্ছে আমদানী রপ্তানী কার্যক্রম। এতে করে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে সরকার রাজম্ব আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বন্দরে সৃষ্টি হচ্ছে অচলাবস্তা।
আমদানীকারক ফারুক হোসেন জানান, সরকারের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক আট বছরের মধ্যে বন্দর পরিচালনাকারী পানামা কর্তপক্ষকে বিওটি এর শর্ত মোতাবেক বন্দরের অভ্যান্তরে সকল অবকাঠামো নির্মান করে পূর্ণ সক্ষমতা অর্জণ করতে হবে। ফোর্ক লিফট, ক্রেন, ব্রেকার, হেবিওয়েট স্কেল স্থাপন করতে হবে। কিন্তু পানামা কর্তপক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করে উল্টো সব ধরনের চার্জ বাড়িয়ে এবং পণ্যবাহি ট্রাক ওজন, লোড আনলোডের নামে ৪ বার করে চার্জ আরোপ করে ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট করছে। বন্দরে পাথরের ট্রাক লোড আনলোড এবং বাংলাদেশি ট্রাক প্রবেশ না করলেও তারা এর চার্জ আরোপ করে আমদানীকারকদের। এতে করে আমদানী ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ বন্দরে ব্যবসা করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
অপর আমদানীকারক এমদাদুল হক জানান, পানামার বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তিনি এ বন্দরে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, যদি ব্যবসা করে লাভ না হয় তবে ব্যবসা করে লাভ কি। তাই এ বন্দরের ব্যবসা তার অর্ধেকে নেমে এসেছে।
শেষে আমদানীকারকরা তাদের ৯ দফা দাবী তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের দাবী জানান, অন্যথায় পরবর্তিতে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
এ ব্যাপারে বন্দর পরিচালনাকারী পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের বন্দর ব্যবস্থাপক মাইনুল ইসলাম জানান, দেশের বেনাপোল ও চট্টগ্রাম ছাড়া সব বন্দরে যে নিয়মে রাজস্ব আদায় করা হয় একই নিয়ম এ বন্দরেও পালন করা হয়। পাথর আমদানীকারকদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাথর ব্যবসায়ীদের পাথর দীর্ঘদিন বন্দরে পড়ে থাকলে ইয়ার্ডভাড়া অনেক বেড়ে যাবার ভয়ে তারা ইয়ার্ডের বাহিরে পাথর আনলোডের দাবী জানান। প্রেক্ষিতে ভারতীয় ট্রাক প্রবেশের পর এন্ট্রি ফি, ওজন মাসুল ও বাংলাদেশি ট্রাক এন্ট্রি ফি এবং লোড আনলোড খরচ নেয়ার পর ভারতীয় ঐ ট্রাক বন্দর থেকে বের করে দেয়া হয়। সেসাথে অন্যান্য সব বন্দরের চাইতে কম টন প্রতি ১২১ টাকা আমদানীকারকদের কাছ থেকে নেয়ার পর পুনরায় আনলোড খরচ ৫২ টাকা ফেরত দেয়া হয়। যা অন্য কোন বন্দরে করা হয়না।
সরকারী রাজস্ব চুরির বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তপক্ষের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে সরকারের সাথে পানামা কর্তপক্ষের চুক্তি মোতাবেক বন্দর থেকে আহরিত অর্থ সোনালী ব্যাংকের ৩ টি হিসাব নম্বরে ভাগ হয়ে যায়। এর একটি অংশ ভ্যাট হিসেবে, ভ্যাট বাদে মোট আয়ের একটি অংশ ৪৯ শতাংস সরকারী তহবিলে এবং ৫১ শতাংশ পানামার হিসাব নম্বরে জমা হয়।যা সরকার পক্ষের একজন যুগ্ম সচিব তদারকি করায় এ খাতে লুটপাটের কোন সুযোগ নাই।
বন্দর ব্যবস্থাপকের দাবী সরকার নির্ধারিত মাসুলের বাইরে অন্য কোন মাসুল বন্দর কর্তপক্ষ নেয় না।বন্দরে কোন ধরনের অনিয়ম বা স্বেচ্ছাচারিতা হয়না বরং একটি মহল সোনামসজিদের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে ভ’ল তথ্য দিয়ে ভিত্তিহীন আন্দোলন করার চেষ্টা করছে।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪ | সময়: ৪:৫৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ