সর্বশেষ সংবাদ :

জাতীয় সংগীত নিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা: বিতর্ক সৃষ্টি হবে- এমন কিছু করবে না অন্তর্বর্তী সরকার

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিভাগীয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিদর্শনের সময় ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। শনিবার দুপুরে রাজশাহী নগরের শালবাগান এলাকায় রাজশাহী বিভাগীয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিদর্শনের সময় ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। বিতর্ক সৃষ্টি হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এমন কিছু করবে না বলে মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। এদিন রাজশাহী বিভাগীয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিদর্শন এবং ইসলাম, সনাতন, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী এবং সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

 

সাংবাদিকেরা সম্প্রতি জাতীয় সংগীত পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘এগুলো বিতর্ক সৃষ্টির প্রয়াস। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও বারবার বলেছেন, বিতর্ক সৃষ্টি হয়, এমন কোনো জায়গায় আমরা হাত দেব না। আমরা হলাম অন্তর্বর্তী সরকার।

এই প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন,‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনা, রাজনৈতিক স্থিতাবস্তা নিশ্চিত করা। এমন পরিস্থিতি যখনই তৈরি হবে, তখন নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত দলকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।’

সম্প্রতি মাজার ভাঙার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাজার, মসজিদ ও মন্দির ভাঙা গর্হিত কাজ। এগুলো যেভাবে আছে, সেভাবে থাকা দরকার। আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, এ রকম কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের ভাতৃত্ববোধ নষ্ট হয়, এগুলো জানালে মুহূর্তের মধ্যেই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা মনে করি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে উপাসনালয়ে যারা হামলা চালায়, তারা মানবতার শত্রু। তারা ক্রিমিনাল।’
সভায় জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এর সভাপতিত্বে ইমাম প্রশিক্ষন একাডেমির সহকারী পরিচালক এ কে এম মুজাহিদুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আলমগীর রহমান, স্থানীয় সরকার রাজশাহী বিভাগের পরিচালক পারভেজ রায়হান, উপদেষ্টা মহোদয়ের একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর মাওলানা জামাল উদ্দিন সন্দীপী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান সিকদার। কুরআন তিলাওয়াত করেন দামকুড়া হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্বারী মনোয়ার হোসাইন। বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. এফ.এম.এ এইচ তাকি, ঐতিহাসিক বৌদ্ধ বিহার পাথরঘাটর অধ্যক্ষ সুশীল প্রিয়াভক্ষু, দারুল আরকাম শিক্ষক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মো. আল আমিন, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি রাজশাহীর সভাপতি ড. মুহাম্মদ কাওসার হুসাইন, ওলামা মাশায়েখ বিভাগ রাজশাহীর সভাপতি মাওলানা রুহুল আমিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোঃ নিজাম উদ্দিন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট রাজশাহী মহানগরের সভাপতি অচিন্ত কুমার বিশ্বাস, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম রাজশাহীর পুরোহিত অরুন কুমার সত্য, খ্রীষ্টধর্মের প্রতিনিধি ক্যাথলিক ধর্মযাজক ফাদার প্যাট্রিত গোমেজ।
এরআগে তিনি পবা উপজেলার ডাঙ্গীপাড়ায় আল-জামি’আহ আস-সালাফিয়্যাহ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন।
প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুর রায্যাক বিন ইউসুফের সভাপতিত্বে বক্তব্যে তিনি বলেন হানাহানি প্রতিহিংসা বন্ধ করুন-অন্তর বড় করুন। আমাদের চিন্তা চেতনা যেন আল্লাহকে সন্তুষ্টির জন্য হয়। আসুন আমরা সবায় মিলে এদেশকে সুখি সমৃদ্ধশালী করে তুলি। প্রধান অতিথির হাতে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ২২ দফা দাবির স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
দাবিগুলো হচ্ছে-সংবিধান সংশোধন ও দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন, প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা করা, উচ্চকক্ষে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভূক্তি, প্রেসিপেন্ট কর্তৃক নিজস্ব পরিষদ গঠন, শরীয়তবিরোধী আইন প্রণয়ন নিষিদ্ধকরণ, শারীয়তভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রণয়ন, সুদমুক্ত ইসলামি অর্থনীতি চালু, জাতীয় সংগীত পরিবর্তন, ভারতের সাথে সমতাভিত্তিক চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন, যৌথ নদীগুলোর ন্যায্য হিস্যা আদায়, প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন, রাজধানীর বিকেন্দ্রিকরণ, স্বধীন বিচার ব্যবস্থা চালু, পুলিশ বাহিনীর সংস্কার, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও গুম নিষিদ্ধকরণ, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, মূর্তি ও ভাস্কর্য নির্মানে অর্থের অপচয় বন্ধ, কৃষিখ্যাতে ব্যাপক ভতূকির ব্যবস্থা, স্বস্থ্য ও ব্যবসায়িক খাতের উন্নয়ন, কওমি শিক্ষা স্বীকৃতি প্রদান ও ইসলামী ফাউন্ডেশনে সালাফী বা আহলেহাদীছের সংযুক্তিকরণ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত, পবা সহকারি কমিশনার ভূমি অভিজিত সরকার, মাদ্রাসার পরিচালকমন্ডলীর সদস্য জুয়েল আহমেদ খান প্রমুখ।
এরপর তিনি আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী পরিদর্শন ও ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সভা পরিচালনা করেন প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম।
এরআগে সকালে তিনি পবা উপজেলা মডেল মসজিদে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের শিক্ষক ও কেয়ারটেকারদের উপজেলা মাসিক সমন্¦য় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। পবা উপজেলা ইসলাসিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরে তিনি পবা উপজেলার কাটাখালিতে জামিয়া উসমানিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। এছাড়াও এদিন বিকালে হযরত শাহ মখদুম (রঃ) দরগা পরিদর্শন করেন শেষে রাজশাহী সার্কিট হাউজে বিভিন্ন বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময়ন করেছেন।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ | সময়: ৬:০১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ