রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
আসাদুজ্জামান মিঠু: বরেন্দ্র অঞ্চলে এবারে আমন ধানক্ষেতে ব্যাপকভাবে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ক্ষেতের কাঁচা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে ইঁদুর। আমনের মাঝামাঝি সময়ে ইঁদুরের আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষকরা।
চলছে ভাদ্র মাস। বৃষ্টির পানি নির্ভর বরেন্দ্র এখন সবুজে সবুজে ভরে উঠছে পুরো মাঠ। সেই সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। মাঠজুড়ে এখন সবুজ স্বপ্নের ছড়াছড়ি। এমন সময় আমনের মাঝামাঝির মুহুর্তে ক্ষেতের কাচা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে ঈঁদুরের দল। ইঁদুরের আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে কৃষকেরা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা জানান, ক্ষেতে পোকা আক্রমণ করলে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকা দমন করা যাচ্ছে। কিন্তু ঈঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। তাই সরকারকে ঈদুর দমনে নতুন প্রদ্ধতি আবিস্কার করতে হবে। যেন সকল কৃষক ঈঁদুর থেকে রক্ষা পাই। নাহলে ক্ষেতের অর্ধেক ফসল ঈঁদুরের পেটে চলে যাবে। লোকসানে পড়বে কৃষকেরা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা জানান, মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টির অভাবে আমনের কিছুটা ক্ষতি হলেও শেষ সময়ে এসে বৃষ্টি হওয়াই ও কৃষকদের চেষ্টায় কিছুটা ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা। কিন্ত কাঁচা ধান ঈদুর কেটে দেয়া নতুন করে চিন্তায় পড়েছে কৃষকেরা।
ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক। কৃষকেরা ক্ষেতে বিষ মাখা বিভিন্ন পদ্ধতিতে টোপ, আতব চালের টোপ কিংবা ফাঁদ পেতেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না।
রাজশাহী অঞ্চলের জেলা উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানান, শুধু বিষ টোপ নয়, কলাগাছ, লাঠি কিংবা বাঁশের কঞ্চিতে পলিথিন বেঁধে দিলে ও রাতে ফসলের ক্ষেতে টায়ার পোড়ানোর পদ্ধতি ব্যবহার করলে ইঁদুর কিছুটা ভয়ে ক্ষেত ছেড়ে চলে যাবে। কৃষকদের দেয়া হচ্ছে পরামর্শ।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে পোকা দমনের পদ্ধতিতে পার্চিং-লগ, লাইন এবং ধোঁনছা গাছ লাগানো হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের উপরে।
ইঁদুরের দ্বারা দেশে বছরে ক্ষতি হয় ৭০০ কোটি টাকারও বেশি ফসল। ২০১৪-১৫ সালে ইঁদুর দ্বারা মোট ৭২৩ কোটি ৭২ লাখ ৭ হাজার ৩৫৫ টাকার শুধু ধান, চাল ও গম ফসলের ক্ষতি হয়েছে। রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান কর্মকর্তা কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. রফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
আন্তজার্তিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৩ সালের এক গবেষণার উদাহরণ দিয়ে ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০ থেকে ৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে। তাই ইঁদুর প্রতিহত করতে সরকারসহ কৃষকদের সচেতন হবে।
রাজশাহীর মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামে কৃষক মনসুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন তিনি। অনুকুল আবহাওয়া থাকায় তার ক্ষেতে ধান অন্য সব বছরের চেয়ে ভালই ছিল। কিন্ত তার ৩ বিঘা ধানের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতক মত কাঁচা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলেছে ইঁদুর।
গোদাগাড়ীর উপজেলার চান্দালায় গ্রামের কৃষক তসিকুল ইসলাম জানান, তার ৮ থেকে ১০ শতক ক্ষেতের কাচা ধান কেটে ফেলেছে ঈদুর। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুয়াযী রাতে ক্ষেতের পাশে পুরনো টায়ার পুড়ানো, পটকা ফোঁটানো, বিষ টোপ ব্যবহার করা করেও ইঁদুর দমন করা যাচ্ছেনা। ধান ঘরে তুলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
ইঁদুরে এমন সমস্যা শুধু কৃষক মনসুর রহমান ও তসিকুল ইসলাসেম একাই নয়, রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি আমন মৌসুমে অন্যসব বছরের চেয়ে এবার ইঁদুরের আক্রমণে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা হাজার হাজার কৃষকের কাঁচা-আধাপাকা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে।
এবিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে একাধিক বার কল দিলেও রিসিব করেনি তিনি।
তবে মুন্ডুমালা পৌর এলাকা দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজিউল হক জানান, ইঁদুর গাছে এমনকি অনেক সময় পানির উপর খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধে বসবাস করে। এই ইঁদুর দাঁতের বৃদ্ধি রোধ করার জন্য সামনে যা পায় কেটে তছনছ করে দেয়।
আমন ক্ষেতে গন্ধ জাতীয় কীটনাশক বোতলে বোতলে অল্প পানি মিশিয়ে রাখলে ইঁদুর ক্ষেত থেকে তাড়ানোর এমন পরামর্শ কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। এসব পদ্ধতি ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।