গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ বিধি ভেঙে আ’লীগ নেতা হয়েছেন অধ্যক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মইনুল ইসলাম। বিধিবিধান লঙ্ঘন করে হয়েছেন গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ। নিজের নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠদের ডিঙিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষের পদ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ হওয়ার পরও ছাড়েননি রাজনৈতিক দলের পদ। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দাপটে করেছেন নানান অপকর্ম। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে অধ্যক্ষ মইনুল রয়েছেন লাপাত্তা।

 

কলেজ জাতীয়করণের সময় শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে চাঁদা তুলেছেন ৭৫ লাখ টাকা। নিয়ম ভেঙে প্রতিমাসে বাড়তি বেতন হিসাবে আরও চার লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তহবিল তছরুপ করে আরও প্রায় ২৫ লাখ টাকা হাতিয়েছেন। সবমিলিয়ে স্বল্প সময়েই কোটি টাকা পকেটে পুরেছেন।

 

আর এসবই মইনুল রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রভাবে করেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করার সাহস কেউ পাননি। তবে ১৩ আগস্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

 

অভিযোগে বলা হয়েছে, মইনুলের অধ্যক্ষ নিয়োগেই ছিল বড় ঘাপলা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সহকারী অধ্যাপকদের বাদ দিয়ে প্রভাষক ফরিদ আখতারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করেছিলেন তৎকালীন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। পরে তাকে দিয়ে মাইনুল ইসলামকে অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রদান করেন। এরপর থেকে ক্ষমতার দাপটে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন অধ্যক্ষ মইনুল।

 

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ হয়। আর শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণের প্রজ্ঞাপন হয় চলতি বছরের ৬ মার্চ। এই প্রজ্ঞাপনে তিনি যোগ্যতা অনুযায়ী পঞ্চম গ্রেড প্রাপ্য হলেও প্রভাব খাটিয়ে নিজের বেতন করে নেন চতুর্থ গ্রেডে। এর ফলে তিনি প্রতিমাসে ১২ হাজার ৫০৬ টাকা করে বাড়তি বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বকেয়া হিসাবেই তিনি বাড়তি নিয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। এছাড়া চলতি বছরে আরও বাড়তি নিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
শিক্ষকরা জানান, প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ হলে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি সরকারীকরণের কথা বলে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম ব্যাপক চাঁদাবাজি করেন। সেসময় তিনি সব শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া কলেজের বিভিন্ন খাত থেকে তছরুপ করে হাতিয়ে নেন আরও ২০ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৭৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

 

ইউএনও আবুল হায়াত কলেজের হাজিরা খাতা যাচাই করেছেন। অনুপস্থিত থেকেও মইনুল হাজিরা খাতায় পরে স্বাক্ষর করার কারণে তিনি সেই দিনগুলো অধ্যক্ষকে অনুপস্থিত দেখিয়েছেন। এছাড়া অধ্যক্ষ লাপাত্তা থাকায় তিনি শিক্ষকদের সভা করে জ্যেষ্ঠ একজন শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকরা সভা করে সহকারী অধ্যাপক আছমা রেহেনাকে অধ্যক্ষ হিসাবে চলতি দায়িত্ব দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে বুধবার সকালে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলামকে একাধিকবার কল করা হয়; কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। গোদাগাড়ীর ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, অধ্যক্ষ মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ | সময়: ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ