রবিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ চারজন শ্রমিকের মধ্যে ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার রাত ১০টায় নদীর চরখানপুর এলাকা থেকে লাশ উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। উদ্ধার হওয়া দুইজন হলেন- চর মাজারদিয়াড় এলাকার এনামুলের ছেলে রাজুু (২১) ও খলিলের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩০)। হরিপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার হুমায়ুন কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, রবিবার দিবাগত রাতে রাজশাহীর পবা উপজেলার চর মাজার দিয়াড়ে যাওয়ার সময় পদ্মা নদীতে এই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। ছোট একটি নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পারাপারের কারণে স্রোতের তোড়ে তা ডুবে যায়। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিখোঁজ ওই চার শ্রমিকদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তবে রাতে তাদের মধ্যে ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো দুই লাশের জন্য নদীর পাড়ে অপেক্ষায় আছে স্বজনরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই ছোট নৌকায় অন্তত ১৬ জন শ্রমিক ছিলেন। তারা রাজশাহী শহরে কাজ শেষে করে চর মাজার দিয়ারে ফিরছিলেন। তার ওই চরের অধিবাসী। এর মধ্যে নৌকা ডুবির পর ১২ জন সাঁতরে তীরে উঠে এসেছেন। তবে রাজু, সবুজ, মোহাম্মদ আলী ও ফারুক নামের চার জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের একটি ডুবুরি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু নদীর তীব্র স্রোত এবং ঘটনাস্থলটি ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়া তারা উদ্ধার অভিযান স্থগিত করে আবারও সদর দপ্তরে ফিরে আসেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবু শামা জানান, পদ্মা নদীতে নৌকা ডুবির খবর পেয়ে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টার দিকে তাদের পাঁচ সদস্যের একটি ডুবুরি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু পদ্মায় তীব্র স্রোত এবং ঘটনাস্থলটিও ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ২শ গজ দূরেই। তাই উদ্ধার অভিযান স্থগিত করে তাদের ডুবুরি ইউনিটটি আবারও সদর দপ্তরে ফিরে আসেন। নদীতে স্রোত কমলে দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তারা এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান সিনিয়র স্টেশন অফিসার।
এদিকে রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হুমায়ুন কবির বলেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন পদ্মার চর থেকে ১৬ জন শ্রমিক কাজে গিয়েছিলেন। কাজ শেষে রবিবার রাতে তারা একটি ডিঙি নৌকায় বাড়ি ফিরছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় তীব্র স্রোতের কারণে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ সময় ১৬ জনের মধ্যে ১২ জন সাঁতরে পাড়ে উঠেন। কিন্তু বাকি চারজন পাড়ে উঠতে পারেনি।
রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাত জানিয়েছেন, ঠিক কজন নিখোঁজ তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ ওই ঘটনার পর কেউ বলছেন, তিনজন। আবার কেউ বলছেন চারজন শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছেন। তাই প্রকৃত নিখোঁজের সংখ্যা কজন হবে সেই ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা হচ্ছে।
এদিকে নিখোঁজদের লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা সোমবার সারাদিন চর মাজারদিয়াড় ঘাটে কাটিয়েছে। নিখোঁজদের অপেক্ষায় থাকা আশরাফুন বেগম (৭০)। তার নাতি রাজু নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হয়েছেন। কান্না জড়ানো কণ্ঠে আশরাফুন বেগম বলেন, ‘কি বলব বাবা কিছু বলার নাই। একই পরিবারের তিনজন মারা গেছে। নদীতে সারারাত খোঁজাখুঁজি করেছে, কিন্তু পাইনি। যারা নদীতে ডুবে নিখোঁজ হয়েছে তারা বেঁচে থাকতে এতোক্ষণ পাওয়া যেত। কিন্তু একজনকেও পাইনি। লাশগুলো পেলেও মনে সান্ত্বনা পেতাম।’ আশরাফুন বেগম সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী নগরীর গুড়িপাড়ার চর মাজারদিয়াড় ঘাটে এভাবে কথাগুলো বলছিলেন।
তিনি বলেন, তারা জমিতে টমেটো লাগিয়ে বাসায় ফিরছিল। এ সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এরপরে তারা সাঁতরে দুইজন পাড়ে উঠেছে , চারজন উঠতে পারেনি। নদীতে উদ্ধার করতে যাওয়া আরেক জামাই খরব দিচ্ছে কাউকে পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন, চর মাজারদিয়াড় এলাকার এনামুলের ছেলে রাজুু (২১), এন্তাজুলের ছেলে সবুজ (২১), খলিলের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩০) ও কালামের ছেলে ফারুক (১৮)।
জানা গেছে, রাজু ও সবুজ চাচাতো ভাই। মোহম্মদ আলী রাজুর দুলাভাই। রাজুর প্রতিবেশি ভাই হয় ফারুক। রাজুর সন্তান হয়েছে তিন মাস আগে। সবুজ বিবাহিত তবে তার সন্তান নেই। মোহাম্মদ আলীর এক ছেলের বয়স ১২ বছর ও মেয়ের বসয় ১০ বছর। ফারুকের বাবা কৃষিকাজ করেন।
নিখোঁজের স্বজন টকেনা বেগম বলেন, রাত-দিন সব সময় পানির নিচে অন্ধকার। আর নদীর পানি ঘোলা। একহাত দূরে কিছু দেখা যায় না। দিন হলে ওতটা সমস্যা হতো না। আর ভরা নদীতে মানুষ পানিতে নেমে খুঁজতেও ভয় পাই। যদি তারা জীবিত থাকত তাহলে এতোক্ষণ পাওয়া যেত। ধরে নিতে হবে তারা আর বেঁচে নেই।