শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: দেশকে আবার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফেরাতে দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান রেখেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেছেন, “প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা পরিষদের কাছে আমাদের অনুরোধ, এদেশের জনগণের স্টেকহোল্ডার হল পলিটিক্যাল পার্টিগুলো। যদি গণতন্ত্র চান, পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সাথে কথা বলুন।” গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এখন মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ চালানোর ভার নিয়েছে। এ সরকারকে সমর্থন দিলেও দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন বিএনপি নেতা হাফিজ। গত রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার সরকারের কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, “কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করব, একটা আলোচনা শুরু করতে আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ সম্পূর্ণ করে যাব, কী কী কাজ মোটামুটি করে গেলে হবে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা দিক নির্দেশনা পেতে পারি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই আসবে। এই দিক নির্দেশনা না-পেলে আমরা দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে আলোচনায় দৃঢ়তার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারছি না।”
সেই আলোচনা দ্রুত শুরুর তাগিদ দিয়ে বিএনপি নেতা হাফিজ অন্তর্র্বতী সরকারে উদ্দেশ্যে বলেন, “সংসদে অতীতে প্রতিনিধিত্ব আছে এই ধরনের রাজনৈতিক দল অতীতে প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে তাদের সাথে দ্রুত আলাপ করুন। কীভাবে গণতন্ত্র উত্তরণ করা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ করে তাদের কাছ থেকে সুপারিশ গ্রহণ করুন।
গণতন্ত্রকে ‘প্রতিষ্ঠিত করতে’ অল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বতী সরকারের ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “একটি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের দায়িত্বভার গ্রহণ করার সুযোগ করে দেন। রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বতীকালীন সরকারের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ‘পতিত স্বৈরাচারের প্রতিবিপ্লব’ রুখতে প্রধান উপদেষ্টাকে ‘কঠোর’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই বিপ্লব যেন পথ হারিয়ে না ফেলে। বিপ্লবের মর্মকথা উপলব্ধি করে প্রতিবিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তাই করুন। এখনো রাষ্ট্র সমাজের শরীরে শেখ হাসিনার বশংবদরাই বসে আছে।
“ছাত্র-জনতার বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব রুখতে সকলকে সর্তক থাকতে হবে। আমি আশা করব, ভবিষ্যতে কেউ যদি প্রতিবিপ্লব শুরু করতে চায়, ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী আওয়ামী লীগ নেত্রী (শেখ হাসিনা) ও পতিত সরকারের সদস্যরা এই বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব করতে গেলে বর্তমান সরকারের উচিত হবে প্রথমে বিডিআরকে (বিজিবি) ডাকা আর বিডিআর না পারলে সেনাবাহিনীকে ডাকেন।”
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, “মুহাম্মদ ইউনূস, আপনি আমাদের গৌরব, আপনি শক্ত হন, নিজেকে দুর্বল ভাববেন না। বাংলাদেশের জনতা আপনাদের সাথে আছে। সুতরাং কোনো দুর্বৃত্ত যাতে বাংলাদেশ অধিকার করতে না পারে সেজন্য আপনারা ভূমিকা রাখবেন। “তারা কি জনগণের পক্ষে নাকি বিপেক্ষ তা আমরা দেখতে চাই। কোন সাহসে আনসার বাহিনী সচিবালয়ের দেয়াল টপকে উপদেষ্টাদেরকে এবং সরকারি কর্মকর্তাদেরকে ঘেরাও করে। তবে কি বিপ্লব অসম্পূর্ণ? অসম্পূর্ণ হলে প্রতিবিপ্লবের চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেব।”
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে গঠন করা নির্বাচন কমিশনের বিলুপ্তি চেয়েছেন হাফিজ। তিনি বলেন, “এরা তো জনগণের নির্বাচন কমিশন কমিশন না। এই নির্বাচন কমিশন দিনের ভোট রাতে করেছে, একদিন আগে করেছে। নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশন ঘুমায়। তিনি বলেছেন যে, দুপুরবেলা দেখলাম যে, চব্বিশ শতাংশ ভোট পড়েছে একটা নির্বাচনে, যখন একটা ঘুম দিলাম, ঘুম থেকে উঠে দেখি ৫৫ শতাংশ হয়ে গেছে। যে দেশে নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমায়, তাহলে এদেশে কিভাবে গণতন্ত্র আসবে? ”
হাফিজ বলেন, “আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা প্রতিবেশী দেশের শাসন চাই না, আমরা অন্য কোনো শক্তিরও শাসন চাই না। আমরা জনগনের শাসন চাই।” হাফিজ বলেন, “যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বিএনপিকে দায়িত্ব দেয় আমরা পুরো জাতিকে মিলিটারি ট্রেনিং দিয়ে সৈনিকে পরিণত করব। কোনো প্রতিবেশী দেশ যাতে আমাদের দিকে রক্তচক্ষু না দেখাতে পারে, আমরা যাতে আগ্রাসনের শিকার না হই সেজন্য আমরা সিটিজেন আর্মি গড়ে তুলব।
“ছাত্ররা বছরে দুই মাস বেসিক সামরিক ট্রেনিং নিয়ে তারপর আবার ছুটি শেষ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা শুরু করবে।” জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে সংগঠনটির প্রয়াত আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভার পরে প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। গত ১২ অগাস্টে ঢাকায় মারা যান রফিকুল ইসলাম মাহতাব।
মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম মিঞার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনসহ মৎস্যজীবী দলের নেতারা বক্তব্য দেন।