শনিবার, ২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেন। এসময় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারিদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে রাজশাহীতে তিনটি পুলিশ বক্সে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
সকালে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে আন্দোলনকারিরা। তারা মিছিল নিয়ে তালাইমারী আসলে সেখানে পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরে আন্দোলনকারিরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর রেলগেট চত্ত্বর অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা রেলগেট পুলিশ বক্সে ব্যাপক ভাংচুর চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পর আন্দোলনকারিরা ভদ্রা মোড়ে আরও একটি পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়াও রাজশাহী স্টেশন এলাকায় শ্রমিক লীগ ও রেলগেট এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও ভাংচুর চালায় তারা।
এদিকে, আন্দোলনকারিরা তালাইমারি মোড়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য সাইফুল ইসলাম এবং রেলগেট মোড়ে বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের একাংশের সমন্বয়কারি রাকিব হাসান অর্ণবকে পিটিয়ে জখম করে। কয়েকদিন আগে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ায় অর্ণবকে এবং পুলিশ বক্স ভাংচুরের ছবি তোলার সময় সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে জখম করা হয়। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজকের বিক্ষোভ মিছিলে আন্দোলনকারীদের কাছাকাছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি। রাস্তা অবরোধ করায় ওই সড়ক দিয়ে যানবাহনের চলাচল বন্ধ আছে। মিছিলে অনেক সাধারণ মানুষকেও অংশ নিতে দেখা যায়। মিছিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ছিলেন।
মিছিল থেকে, এসময় ‘এক দুই তিন চার, স্বৈরাচার তুই গদি ছাড়’, ‘শিবির ট্যাগের ছলচাতুরী, বুইজা গেছে জনগণ’, ‘দফা এক দাবি এক, স্বৈরাচারের পদত্যাগ’, ‘আবু সাঈদ মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ এমন স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।
রুয়েট শিক্ষার্থী তানভির হাসান বলেন, সারাদেশের সাথে সমন্বয় করে আজকে আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এখানে আমাদের একটাই দাবি স্বৈরাচার সরকার পদত্যাগ। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া শিক্ষার্থী সমাজ আর ঘরে ফিরবে না। এ আন্দোলন আর কোটা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। পুলিশ প্রশাসন আমাদের ভাইদের উপর গুলিয়ে চালিয়েছে, তাদেরকে বলবো এখন সাবধান হোন। আপনাদেরও ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের দিকে তাকান।
রাবি শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ বলেন, আবু সাঈদের মতো জীবন দিতে আজকে মাঠে নেমেছি। হয়তো জীবন দিবো না হয়তো স্বৈরাচার সরকার পদত্যাগ করে মাঠ ছাড়বো। আমার ভাইগুলোর রক্তের দাগ বাংলার জমিনে এখনো শুকায়নি। কি দোষ ছিল তাদের। তারা সংবিধান অনুযায়ী তাদের অধিকারের কথা বলেছিল। আজকে আমাদের আন্দোলনের দাবি একটা, স্বৈরাচার সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আমরা তাদের সাথে যোগ দিয়েছি। আর কত ঘরে বসে আমার ছেলেদের রক্ত দেখবো। আজ থেকে এ আন্দোলনে গুলি চালালে সেই গুলি আগে শিক্ষকদের গায়ে লাগবে, তারপর আমাদের ছাত্রদের।শিক্ষার্থীদের আর কোন ভয় পাবার কারণ নেই তাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকরা আজ থেকে তাদের সামনে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি এবং তাদেরকে সুরক্ষা দিতে সবসময় তাদের সাথেই আমরা আছি।
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আন্দোলনকারিদের বিক্ষোভে বাধা দেয়নি। তাদের নির্বিগ্নে বিক্ষোভ করতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরও তারা পুলিশ বক্সগুলোতে হামলা করে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এছাড়াও রাস্তার পাশের বেশকিছু স্থাপনাতেও ভাংচুর চালিয়েছে তারা। এছাড়াও পুলিশের বিশেষ শাখার সাইফুল ইসলাম নামের কনস্টেবল পিটিয়ে জখম করেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার হাসপাতালে সাইফুল ইসলামকে দেখতে যান। এ সময় তিনি সাইফুরের শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।