রবিবার, ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
রাবি প্রতিনিধি: কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ের ১০টি হলের ১৫৮টি কক্ষে তান্ডব চালানো হয়েছে। এই চলমান তান্ডবে প্রায় চার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। আবাসিক হলে ভাঙচুর ও অগ্নি-সংযোগের ঘটনার তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ শনিবার এ তথ্য জানান উপাচার্য ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্যাহকে আহবায়ক করে কমিটির সদস্য-সচিব করা হয়েছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুলকে।
তদন্ত কমিটিকে ঘটনার বিবরণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং কী করণীয় (সুপারিশ) সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তার জন্য কমিটিকে ৮ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।
উপাচার্য বলেন, আবাসিক হলের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। তাতে দেখা গেছে ১০টি হলের ১৫৮টি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমান চার কোটি টাকা।
উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার আরও বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয় আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও হলগুলোকে বসবাসের উপযোগি করে তোলতে হবে। বেশকিছু হল এমন ক্ষতিগ্রস্থ যে কেউ দেখলে তার মনে আঘাত লাগবে, হয়তো তার চোখ থেকে পানি বেড় হয়ে আসতে পারে। তাই আমরা চাইনা যে শিক্ষার্থীরা এসে এসব দেখুক। আমরা এসব সংস্কারের উদ্যোক্ত নিয়েছে।
ক্যাম্পাসে সহিংসতার বর্ণানা দিতে গিয়ে উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যলয়ে যে সহিংসতা ঘটে গেছে এটা অনেক দুঃখ-জনক। প্রথমে যে আন্দোলনটা হয়ে ছিলো কোটা সংস্কারের দাবিতে এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিলো।
কিন্ত গত ১৬ জুলাই একটা দুর্বিত্তায়ন হয়ে গেল ক্যাম্পাসে। বাইরের লোক-জন ঢুকে জ্বালাও-পোড়াও করে গেল। তার পরের দিন ১৭ জুলাই কোটা বিরোধী আন্দোলনে যারা ছিলো তাদের সাথে আমাদের তিন দফা বৈঠক হয়েছে। এতে তাদের সাথে আমাদের সঠিক ভাবেই বোঝাপাড়া হয়ে যায়। সন্ধায় প্রশাসন ভবন থেকে আমাদের বেরিয়ে যাওয়ার কথা। তারা যখন বাইরে বের হয়ে গেল তখন ছাত্ররা আমাদের খবর দিলে আন্দোলন ছিনতাই হয়ে গেছে। মাইক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ক্যাম্পাসের মধ্যে বহিরাগতরা ঢুকে পরেছে। তারা অস্ত্র-সস্ত্রে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকছে। আমরা আর আন্দোলনে নাই। তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে খারাপ দিকে যাচ্ছে বিষয়টা। এর পর শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর বহিরাগতরা এসে প্রশাসন ভবনে তালা মেরে দেয়। বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয় এবং জেনেরেটারে বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে তারা। তখন প্রশাসন ভবনে আমার সাথে প্রায় অর্ধশত শিক্ষক ও প্রায় শতাধিক কর্মচারী অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
গোলাম সাব্বির সাত্তার জানান, এবার সন্ত্রাসী যে আকারে ক্যাম্পাসে এসেছে তাদের যে চেহারা আমরা দেখেছি তা আগামীর জন্য খুব দুঃখাজনক। সবাইকে অনুরোধ করবো শান্ত হতে।
এ সকল বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবতে হবে যে আমরা কিভাবে এগোতে চাই। কারণ, বিশ্ববিদ্যলয় মানেই এগিয়ে যাওয়া। আমরা একদিন যদি থেমে থাকি তা হলে কিন্তু অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। আমরা থেমে থাকতে চাই না। আমাদের এখন যেতে হবে বহুদূর।