রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
জি এম ক্যাপ্টেন, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে দেখা দিয়েছে নদনদীতে তীব্র নদী ভাঙ্গন। দুধকুমার নদের করাল গ্রাসে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ও সড়ক উপচে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তির্ণ জনপদ। দীর্ঘ হচ্ছে বানভাসীদের তালিকা।
রবিবার সকালে কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার আকরাম মাষ্টারের বাড়ির সামনে ভেঙ্গে গেছে এলজিইডি ক্ষুদ্র ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের নির্মিত একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ১৫ মিটার। একই দিন বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ভোরে মুড়িয়া গ্রামে এক জায়গায় বাঁধ ভাঙ্গার উপক্রম হলে এলাকাবাসী তা নিজ উদ্যোগে সংস্কার করেন। এছাড়া একই ইউনিয়নের তেলিয়ানিতে এর আগে শনিবার একটি বেড়ি বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। কচাকাটা থেকে আয়নালের ঘাটগামী পাকা সড়ক উপছে পানি প্রবেশ করছে বিস্তির্ণ এলাকায়। তেলিয়ানি গ্রামের বাসিন্দা ওছমান গণি জানান, অস্বাভাবিকভাবে দুধকুমারের পানি বৃদ্ধির কারণে সকাল ১১টার দিকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। এখন ক্রমান্বয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবেদ আলী বলেন, পানি যেভাবে প্রবেশ করছে তাতে করে তেলিয়ানির অধিকাংশ ঘর-বাড়ীতে পানি উঠে যাবে। একই অবস্থা যেসব এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গেছে তার আশেপাশের গ্রামগুলোর।
অপরদিকে কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার গ্রামের আকরাম মাষ্টারের বাড়ি সংলগ্ন স্থানীয় সরকার বিভাগের ক্ষুদ্র পানি ব্যাবস্থাপনা প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধের ১৫ মিটার জায়গা ভেগে হু হু করে পানি ঢুকতে থাকে তিনটি গ্রামে।
বামনডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি জানান, শনিবার মিয়াপাড়ায় বেড়ি বাঁধের দুটি স্থানে ভেঙ্গে যায়। রবিবার তেলিয়ানিতে বাঁধ উপচে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। ফলে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে অনেক গ্রাম।
ফলে এসমস্ত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রুপ ধারণ করছে। টানা ৭দিন ব্যাপী স্থায়ী বন্যায় দুধকুমার, ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার বন্যা প্লাবিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলার দুটি পৌরসভা সহ প্রায় ৬০টি ইউনিয়নের দুলাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে মানুষ যেসব উঁচু স্থানে গবাদিপশু রেখেছে, গত দুদিনে হুহু করে সেসব স্থানে পানি ওঠায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পরেছে জলবন্দি মানুষ। জীবন বাঁচাতে অনেকে নিজস্ব নৌকায়, উঁচু রাস্তায়, ফ্লাড শেল্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উঁচু ভূমিতে কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ ইকাবাল রাজিব বাঁধ ভাঙ্গার বিষয়ে জানান, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কেউ জানায়নি। খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে পারবো।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ চলমান আছে। সেগুলো বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙ্গার কোন খবর তাদের কাছে নেই। গতকাল শনিবার যেটি ভেঙেছে সেটি একটি পুরাতন সড়ক। তারপরও সেটি রক্ষার্থে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কোথাও কোন সমস্যা থাকলে আমাদের নজরে দেয়া হলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবো।