চতুর্মুখী আন্দোলনে অচল রাবি

স্টাফ রিপোর্টার :
পেনশন সংক্রান্ত ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে সর্বাত্বক কর্মবিরতি পালন করছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে কোটা বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। চলমান এ আন্দোলন ও কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম। একাডেমিক ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে প্রশাসনিক কার্যক্রম।

 

রোববার (৭ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন চত্বর সামনে মিলিত হয়ে সপ্তম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বুদ্ধিজীবি চত্বরে সমাবেশ করেন রাবি অফিসার সমিতি। এদিকে বেলা সাড়ে ১২টায় প্যারিস রোডে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন রাবির ডিরেক্টর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। অন্যদিকে বিকেল তিনটায় প্রতিবাদ সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবেন রাবির ‘কোটাপদ্ধতি সংস্কার আন্দোলন’।

 

 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছে। বিভাগগুলোর মধ্যে রয়েছে – ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অনিন্দ্য-৬৫ ব্যাচ(২০২০-২১)সেশন, “আইন রিক্ত-৪৩,এছাড়াও আইনের ৪৪,৪৫,৪৬ ব্যাচ, মনোবিজ্ঞান ৬৫ ব্যাচ(২০২০-২১), গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ২০২২-২৩ সেশন এবং ৩০ তম ব্যাচ(২০২০-২১), রাষ্ট্রবিজ্ঞান ৫৮ ব্যাচ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ ডায়নামিক-৬৬ ব্যাচ ক্লাস বর্জন করেছেন।

 

তবে এ প্রসঙ্গে রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুক সরকার জানান, “এটি শুধু শিক্ষকদের নয়, শিক্ষার্থী-কর্মকর্তাসহ সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার আন্দোলন। আমরা বাধ্য হয়েই সর্বাত্মক আন্দোলনের মতো কঠোর কর্মসূচিতে পালন করছি। তবে আমাদের দাবি পূরণ হয়ে গেলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়টিও আমাদের মাথায় আছে।”

 

 

অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এই আন্দোলনে যদি আমরা না দাড়াই তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তচিন্তার যে স্থান তা রক্ষা করতে পারবো না। শিক্ষকদের কন্ঠরুদ্ধ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষাব্যবস্থা একটা গভীর সংকটে পড়বে, অনাস্থার যায়গা তৈরি হবে। অতি দ্রুত প্রত্যয় স্কিম বাতিল এবং স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো তৈরির আহ্বানও জানান তিনি।

 

রাবির অফিসার সমিতির সভাপতি মুক্তাদির হোসেন রাহি বলেন, বহুদিনের ইতিহাস, বহু কালের ইতিহাস, কেন ২০১৫ সালে পে স্কেল ঘোষণা করা হলো? তার ৩০%, ৫০% প্রক্রিয়া কোনো প্ল্যানে কুলালো না যে কিভাবে করা হবে। আজ ১৫ সালের একটি আইটেমের দাম বলেন আর ২৪ সালের একটা আইটেমের দাম বলেন তা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই আমরা কোনো ধরনের হিসাব করি না। আমরা করি পেটের হিসাব, আমরা করি পেশাজীবির হিসাব, আমরা করি দেশের সম্মানের হিসাব, শিক্ষার হিসাব। এভাবেই আমাদের সরকারের সাথে সংঘর্ষে দাড় করালো। কেন এরকম প্ল্যান উদয় হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের।

 

অবস্থান কর্মসূচিতে রাবির ডিরেক্টর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার হিসেবে জয়েন করি ২২ হাজার স্কেলে জয়েন করি। ২৫% বাসা ভাড়া পাই, চিকিৎসা ভাতা পাই, শিক্ষা ভাতা পাই এই দিয়ে আমাদের ৩২-৩৩ হাজার টাকা পাই। বর্তমান যে দব্যমূল্যের উদ্ধোগতি তা দিয়ে আমাদের কোনো ভাবেই চলে না। আমরা একটা চিন্তা করি ভবিষ্যতে আমরা যে পেনশন পাবো তা দিয়ে আমরা বাড়ি করবো, গাড়ি করবো, সন্তানদের বাহিড়ে পড়াশোনা করাতে পাঠাবো। কিন্তু তাতেই এখন বাঁধা দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আমরা চাই দ্রুত এর সমাধান হোক।

 

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস এবং ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়। এছাড়াও ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৪ | সময়: ৭:১৩ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine