সর্বশেষ সংবাদ :

বরেন্দ্র অঞ্চলে চাষে ভূ-উপরিভাগের পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

নওগাঁ প্রতিনিধি: বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার মতো ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিভাগের পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে খাল-বিল, পুকুর-দিঘি সহ ভূ-উপরিভাগে জলাধারসমূহে সারা বছর পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া এই অঞ্চলের চাষাবাদ চর্চার মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে।
শনিবার উন্নয়ন সংস্থা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) এক্সটেন্ডেড কমিউনিটি ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রজেক্ট-ড্রট (ইসিসিসিপি-ড্রট) প্রকল্পের অবহিতকরণ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে সকাল ১০টায় শুরু হওয়া দিনব্যাপী এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি থেকে বক্তব্য রাখেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলার সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার, এনডিসি। কর্মশালায় প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সার্বিক কর্মকান্ডের ওপর উপস্থাপনা প্রদান করেন পিকেএসএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি ছাদেক।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান সজল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন, মান্দার ইউএনও লায়লা আঞ্জুমান বানু প্রমুখ।
খরা প্রবণ অঞ্চলের মানুষের অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘের গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় এক্সটেন্ডেড কমিউনিটি ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রজেক্ট-ড্রট (ইসিসিসিপি-ড্রট) প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পিকেএসএফ। ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই প্রকল্পের আওতায় নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের খরাপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য পানির সংস্থান, পুকুর-দিঘি-খাল পুনঃখনন, ফসল বিন্যাস, ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রোপণের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
প্রকল্পটি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৮টি উন্নয়ন সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা পিকেএসএফের সঙ্গে চুক্তবদ্ধ হয়েছে। নওগাঁর পাঁচটি উপজেলা নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা ও নওগাঁ সদর উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, কৃষিই এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাবিকাঠি। আর কৃষি কাজে প্রচুর পরিমাণে পানির ব্যবহার হয়ে থাকে। এতে করে দিন দিন ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া খরার প্রকোপ ক্রমাগত বাড়ছে। ফসল উৎপাদন যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও ঠিক রাখতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলের খরা মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে পিকেএসএফের ইসিসিসিপি-ড্রট প্রকল্প ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ ও ভূগর্ভস্থ পানির আধার বৃদ্ধির জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারের লক্ষ্যে বরেন্দ্র অঞ্চল বিশেষ নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলায় অবস্থিত বিভিন্ন খালগুলোকে সারাবছর সচল রাখতে হবে। খালে সারাবছর পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পদ্মা, মহানন্দার মতো বড় নদী থেকে খালে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ছোট ছোট প্রকল্পে টাকা ব্যয় না করে বড় নদী থেকে খালে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করা গেলে এই অঞ্চলে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে যাবে। এতে করে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কম হবে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ঠিক থাকবে। নদী-খাল পুনর্জীবিত করার পাশাপাশি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্রচুর বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারি উদ্যোগে ১৩ হাজারের বেশি গভীর নলকূপ এবং বেসরকারিভাবে আরও প্রায় অর্ধলক্ষ গভীর-অগভীর নলকূপ বসানো হয়েছে উল্লেখ করে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সারওয়ার জাহান সজল বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে বিশেষ করে নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলায় সার্ফেস ওয়াটার (ভূ-উপরিস্থ) পানির উৎস খুবই কম। এজন্য এসব এলাকায় কৃষি জমিতে সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। এ অবস্থায় এ অঞ্চলে চাষাবাদ চর্চায় পরিবর্তন আনতে হবে। ধানের পরিবর্তে গম, ভুট্টা, সরিষা ও তুলা জাতীয় ফসল উৎপাদন বাড়াতে হবে।
ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে খাল-বিল, পুকুর-দিঘি সহ ভূ-উপরিভাগে জলাধারসমূহে সারাবছর পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে ইসিসিসিপি-ড্রট প্রকল্পের মতো আরও কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।


প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২৪ | সময়: ৫:২২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ