রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
রাবি প্রতিনিধি: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে রাজশাহী টু ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বেলা সাড়ে ১০টায় বৃষ্টি উপেক্ষা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে অবস্থান কর্মসূচির পর মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। মহাসড়কে এদিন বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচির পর এক মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট হয়ে ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে এসে আন্দোলন শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী এদিন সকাল ১০টা থেকে ছোট ছোট বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে সমতেব হন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা- ‘কোটা না মেধা, কোটা কোটা’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘১৮’র হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘মেধাভিত্তিক নিয়োগ চাই, প্রতিবন্ধী ছাড়া কোটা নাই’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না, ‘সারাবাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস।
এরপর প্যারিস রোডে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন রাজশাহী টু ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্যাম্পাসের সামনের এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও কর্মসূচি চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে চার দফা দাবিও জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল- ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকুরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাকোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা ব্যবহার করতে পারবে। উল্লেখ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতি জনশুমারির সাথে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কর্মসূচীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, কোনো দুষ্কৃতিকারী আমাদের আন্দোলনের মাঝে ঢুকে যেন এটিকে নষ্ট করে না দিতে পারে সেদিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। প্রতিদিন আমরা একের পর এক কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।
কর্মসূচির বিষয়ে আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্বদানকারী বিশ্ববিদালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী সজীব বলেন, একটা রাষ্ট্রে কোটা দেয়া হয় মূলত বৈষম্যদূরীকরণের লক্ষ্যে। আমরা বলছি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে একটা দেশে যদি শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা দেয়া হয়ে থাকে। তারমানে আমরা স্বীকৃতি দিচ্ছি যে এখানে অর্ধেকেরও বেশি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারেনা। এই অযৌক্তিকতার বিরুদ্ধে, বৈষম্যের বিরুদ্ধেই মূলত আমাদের এই কোটা সংস্কার আন্দোলন। আগামীকালও যথারীতি আমরা সকাল ১০টায় অবস্থান কর্মসূচী পালন করব।
আন্দোলনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রেজোয়ান গাজী মহারাজ বলেন, আমরা ২০১৮ সালের পরিপত্রটি বহাল চাই। যেহেতু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা পদ্ধতি। তাই আমরা চাই, আদমশুমারীর মতো বাংলাদেশে যত ভাগ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী আছে তা হিসেব করে কোটা ব্যবস্থা রাখা হোক। তবে এই কোটা কেবল একজন ব্যক্তি একবারই ব্যবহার করতে পারবে। যতদিন পর্যন্ত কোটা সংস্কার করা না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যৌক্তিক। বর্তমান সময়ে এসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি-নাতনিদের কোটা দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। পৃথিবীর কোনো দেশেই এইরকম কোটা ছিলো না, এখন নেই এবং ভবিষ্যতে থাকবে না। এসময় কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।