সর্বশেষ সংবাদ :

কেশরহাটে রোগাক্রান্ত গরুর মাংস বিক্রির কারণে জনসাধারণ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে!

রাসেল সরকার, মোহনপুর:
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বৃহৎ বানিজ্য কেন্দ্র কেশরহাট বাজারে নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে অসুস্থ এবং রোগাক্রান্ত গরুর মাংস। এ কারনে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে জনসাধারণ। এবাজারের বড় মাংস ব্যবসায়ী কসাই কাদের হাজি। দুই-দুইবার হজ্ব করে ডাবল হাজির তকমা লাগিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রমরমা এ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তিনি।

 

অভিযোগ উঠেছে, এই কসাই কাদের এলাকার বাইরে থেকে নিয়মিত অসুস্থ গরু পানির দামে কিনে জবাই করে বাজারে খুচরা এবং হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছে চড়া দামে মাংস বিক্রি করে থাকেন। এ সবই করেন রাতের আধারে। এছাড়াও সরকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার মাধ্যমে জানা গেছে, কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামানের সুপারিশেই কসাই কাদেরের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নিতে পারেননা।

 

কেশরহাট বাজারে গরুর মাংসের কালাভুনার দোকান রয়েছে ১৫/২০টি। অধিকাংশ হোটেল মালিকরা কসাই কাদেরের কাছে মাংস কিনে থাকেন। গত ৩ জুলাই রাতে সরেজমিনে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। যার একাধিক ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে। ওই ভিডিও ফুটেজে কসাই কাদেরের নিয়োগ করা কর্মচারী বাবুল হোসেন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এমন ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। অভিযুক্ত কসাই কাদের হাজি (৬০) কেশরহাট পৌর হরিদাগাছি গ্রামের মৃত কলিমুদ্দিনের ছেলে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি গাভী গরু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে। জানা গেছে, সন্ধ্যার পরে গরুটি যানবাহনে করে লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে কেশরহাট মাছ বাজারে জবাই করার জন্য রাখেন। সেখানে বাবুল নামে এক কসাই গরুটি পাহারা দেন। অসুস্থ গরুটির দুই জায়গায় মাংস পঁচে যাওয়ায় সেখানে মাছি বসছে। গভীর রাতে গরুটি জবাই করে বাজারের ভাতের হোটেল ব্যবসায়ীসহ অন্যান্যদের কাছে মাংসগুলি বিক্রি করা হবে।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানকার কসাই ও ভাতের হোটেল এর দোকানদারদের যোগসাজশে দিনের পর দিন বিক্রি হচ্ছে অসুস্থ গরুর মাংস। নিয়ম অনুযায়ী গরু জবাই করার পূর্বে তা সুস্থ রয়েছে কি না, তার সনদ ও জবাইয়ের অনুমোদন নিতে হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস অফিস হতে কিন্তু কসাই কাদের হাজি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই অসুস্থ গরু লোক চক্ষুর অন্তরালে রাতের আঁধারে জবাই করে ফ্রেশ গরুর মাংস বলে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে আর্থিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহক অন্যদিকে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে স্থানীয়দের স্বাস্থ্য। অন্যদিকে ভাল গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করে লোকসান গুনছেন অন্যান্য মাংস ব্যবসারীরা।

 

স্থানীয়রা জানায়, কসাই কাদের হাজি দীর্ঘদিন যাবত কেশরহাট বাজারে অসুস্থ গরু কিনে তা চড়ামূল্যে বাজারে বিক্রি করেন। এছাড়াও গরু অসুস্থ হয়ে মরে যাওয়ার সময়ও তা জবাই করে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানকার ভাতের হোটেল ব্যবসায়ী টিপু, মিজান, আকরাম, আনাম, তছি, কামরুল ও ইনসানসহ অন্যান্যরা কসাই কাদের হাজির থেকে অল্পদামে গরুর মাংস কিনে তা কালাভুনা করে উচ্চমুল্যে ভোজন রসিকদের কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, কাদের হাজি কয়েকদিন আগে ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত দুটি অসুস্থ গরু জবাই করে বিক্রি করেন। কসাই কাদের হাজির বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তার ছেলেসহ তার লোকজন প্রভাব তৈরি করেন বলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

 

অভিযুক্ত কাদের কসাইয়ের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, গরুর মালিক কেশরহাট পৌর এলাকার বাকশৈল গ্রামের ফজলু। অসুস্থ গরুটিকে চিকিৎসা দিয়েও সুস্থ না হওয়ায় গরুটি বিক্রি করেন। আমার ছেলে গরুটি কিনে এনেছে। তিনি অসুস্থ গরুর মাংস বিক্রি করার কথাটি স্বীকার করলেও মৃত গরুর মাংস বিক্রি করেননা বলে জানান। তবে তিনি যার কাছে গরুটি কিনেছেন বলে জানিয়েছেন, সেই ঠিকানায় গিয়েও তার সত্যতা মেলেনি। ফজলু এ ধরনের কোন গরু কসাই কাদেরের কাছে বিক্রিই করেননি বলে জানান। এসময় সাংবাদিকদের অভিযুক্ত কসাই কাদের মোবাইল ফোনে ম্যানেজের চেষ্টা চালান।

 

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: খন্দকার সাগর আহম্মেদ বলেন, কেশরহাটে কসাই কাদের হাজির বিরুদ্ধে এর আগে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। তা সতর্ক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন উপজেলা স্যানিটারী কর্মকর্তা। এবিষয়ে উপজেলা স্যানিটারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, কসাই কাদের হাজি কেশরহাট পৌর মেয়র এর ভাই। তার বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে মেয়র সাহেব রিকোয়েস্ট করেন বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়না।

 

এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জোবায়দা সুলতানা জানান, অভিযোগটি শুনলাম। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: জুলাই ৪, ২০২৪ | সময়: ৮:৩৪ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine