বুধবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা :
রাজশাহীর বাঘা পৌর মেয়র ও আ’লীগ নেতা আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্ণীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি তার দুর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করতে গিয়ে খুন হয়েছেন উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল। এ ঘটনার পর থেকে উত্তপ্ত বাঘা, লাপাত্তা রয়েছেন মেয়র আক্কাছ আলী। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে বাঘা পৌর সভার কার্যক্রম।
স্থানীয় লোকজন জানান, বাঘা পৌর সভায় বিশেষ কোন উন্নয়ন না হলেও পৌর কর না দিয়ে বাড়িতে থাকা দায়। বিগত মেয়র পৌর এলাকায় বাড়ি প্রতি যে ট্যাক্স ( হোল্ডিং) নিতেন, এখন তার ডাবলের ও বেশি গুনতে হয়। এদিক থেকে আমরা পৌরবাসী নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এখানে না আছে সু-প্রিয় পানির ব্যবস্থা, না আছে উন্নত স্যানিটেশন সহ যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাষণ এবং উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। লোকজন আরো বলেন ,গত এক বছরে অত্র পৌর এলাকায় যে সকল উন্নয়ন মুলক কাজ হয়েছে তার-সব গুলোতেই রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম।
বাঘা পৌর সভার ৭ নং ওয়াড কাউন্সিলর ও পৌর আ’লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকার জানান, বর্তমান মেয়র আক্কাছ আলী দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এই পৌরসভার অনিয়ম ও দুর্ণীতির কথা বলে শেষ করা যাবে না। গত এক বছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে এই পৌরসভা কেবল নগর অবকাঠামো ও বেতন ভাতা বাবদ পেয়েছেন ৯৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও প্রতি বছর রাজস্ব থেকে পাওয়া যায় আরো প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। এ অর্থের বাইরে পৌর এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের নামে বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল(এডিপি) খাতেও বিপুল পরিমান অর্থ আসে। অথচ অত্র পৌর সভার অধিনন্ত কর্মকর্তা-কর্মীচারিরা গত ৬ মাস কোন বেতন পাননি। ফলে অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এদিকে মেয়র আক্কাছ আলীর নামে গত ২২ জুন বাঘা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল স্বাক্ষরিত দুর্নীতি দমন কমিশন ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ে প্রেরিত একটি অভিযোগে জানা গেছে, আক্কাছ আলী ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে গৃহিত আয়ের টাকা ভুয়া বিল ভাওচার দেখিয়ে অবৈধ ভাবে সকল অর্থ উত্তোলন করে থাকেন। এ ছাড়াও হাট বাজার ইজারার টাকা আংশিক ব্যাংকে জমা দিয়ে বিল ভাওচারের নামে আত্নসাত করেন।
ঐ অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, মেয়র আক্কাছ আলী ভুমি রেজিস্টেশন করের বিল ঠিকমত ব্যাংকে জমা দেননা। তিনি পৌর সভা সংস্কারের নামে একটি রুম ভেঙ্গে শীতাতাপ (এসি)নিয়ন্ত্রিত মসজিদ নির্মান করে ৬০ লক্ষ টাকার বিল ভাওচার করেছেন। এ ছাড়াও গণসৌচাগার নির্মানের নামে পৌরবাসীদের কাছ নৈশ্য প্রহরীর মাধ্যমে ৫ হাজার করে অর্থ উত্তোলন, সরকারী আয়কর ভ্যাটের টাকা সরকারী কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজে আত্নাসাৎ ,পৌর মার্কেটে ২৪ টি দোকান বাবদ (ঘর-ভাড়া)আদায়কৃত অর্থ সঠিক ভাবে ব্যাংকে জমা না করা, এডিবি খাতে বাৎসরিক ৬৫ লক্ষ টাকা বাদে স্পেশাল বরাদ্দে পাওয়া প্রায় কয়েক কোটি টাকা ,এ ছাড়াও আই.জি.পি খাতে কোটি-কোটি টাকা আয় ব্যায়ের সঠিক হিসেব তিনি ছাড়া কেউ রাখেন না। বা কাওকে জানানো হয়না। এতে করে ক্ষুব্ধ সকল কাউন্সিলর।
বাঘা উপজেলা আ’লীগের প্রায় ডজন খানেক নেতা-কর্মী জানান,গত ২২ জুন মেয়র আক্কাছ আলীর এ সকল অনিয়ম,দুর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আমরা মানব বন্ধন করতে গেলে আমাদের উপরে বর্বরোচিত হামলা চালাই আক্কাছ-সহ তার সন্ত্রাসী বাহিনী। এ ঘটনায় গুরুত্বর আহত হন দলের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল। অত:পর ২৬ জুন বিকেলে রামেক হাসপাতালে আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর পর থেকে উত্তপ্ত বাঘা।
তবে এ মামলার প্রধান আসামী আক্কাছ আলী এখনও গ্রেফতার হয়নি। আ’লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম বাবুল মারা যাওয়ার পর থেকে লাপাত্তা রয়েছেন তিনি। তাকে কোন ভাবেই খুজে পাচ্ছে না পুলিশ। এতে করে স্থবির হয়ে পড়েছে বাঘা পৌর সভার কার্যক্রম। গত ১০ দিন এ পৌর সভায় অর্থিক কোন লেনদেন হয়নি। অনেকেই নাগরিক সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
এসব বিষয় জানতে মেয়র আক্কাছ আলীকে খুজে পাওয়া যায়নি। বাঘা পৌরসভার সচিব মোঃ রবিউল ইসলামের কাছে পৌর সভার অনিয়ম, দুর্ণীতি এবং বাৎসরিক উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন মেয়র নেই। আমার কাছ থেকে পৌর সভার যে কোন তথ্য নিতে হলে আপনাকে জেলা প্রশাসকের অনুমনি নিয়ে আসতে হবে।
সানশাইন / শামি