সর্বশেষ সংবাদ :

গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: নাটোরের বড়াইগ্রামে তীব্র গরমের সঙ্গে হঠাৎ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। দিন রাত মিলে ১২-১৩ ঘন্টা লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। তীব্র শোডশেডিংয়ের পাশাপাশি লাইন মেরামত ও গাছের ডাল কাটার অজুহাতে প্রায় দিনই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টানা বিদ্যুৎ থাকছে না। তারপরও রাতের বেলায় বেশি লোডশেডিং হওয়ায় শিশু, শিক্ষার্থী ও বয়োজ্যেষ্ঠরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী, মৎস্যচাষী, অটোরিকশা ও রিক্সাভ্যান চালকসহ বিভিন্ন কারখানার মালিকরা। এতে গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়ে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে লোডশেডিং নিয়ে ক্ষোভ ঝারছেন।
জানা গেছে, বিদ্যুৎহীন অবস্থায় প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। ঘেমে জ্বর-কাশিসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। এছাড়া আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আউশ ও রোপা আমনের ক্ষেতে সেচ দিতে সংকটে পড়েছেন কৃষক।
দোগাছি গ্রামের সাবেক সেনাসদস্য মইনুল ইসলাম বলেন, সারাদিনে কতবার বিদ্যুৎ যায়, তার ইয়ত্তা নেই! তার ওপর শুধু রাতেই ৫-৬ বার লোডশেডিং হচ্ছে। কখনও কখনও রাতে একটানা দুই আড়াই ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। ফলে গরমে শিশুরাসহ কেউই ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। রয়না গ্রামের গৃহবধু রুপালী খাতুন বলেন, লোডশেডিংয়ে তীব্র গরমের কারণে আমার ছোট দুইটা বাচ্চা নিয়ে খুব বিপাকে আছি।
রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘেমে দুজনেই ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, একই সমস্যায় ভূগছে গ্রামের প্রায় সব পরিবার। ঘন ঘন এমন লোডশেডিংয়ে গ্রামের মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। দিনে যেমন-তেমন কিন্তু, রাতে লোডশেডিং বন্ধ রাখা গেলে মানুষজন শান্তিতে অন্তত ঘুমাতে পারতো।
উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের বিএডিসি প্রকল্পের নলকূপের মালিক রিপন হোসেন জানান, কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের কবলে ফলে ধানের সেচের পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না; ফলে হুমকির মুখে পড়তে পারে ধানের আবাদ। দিনে-রাতে মিলিয়ে ৮-১০ বার লোডশেডিং হয়।
উপজেলার রয়না ভরট গ্রামের আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ৭-৮ দিন ধরে প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে লোডশেডিং হচ্ছে। এক ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলে দেড়-দুই ঘন্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। মামুদপুর গ্রামের আবু রায়হান বলেন, আমি অটোরিক্সা চালাই। সারারাত লাইন দিয়ে রেখেও লোডশেডিংয়ের কারণে রিক্সা ঠিকমতো চার্জ হয় না। এতে দিনের বেলায় গাড়ি চালাতে না পেরে আয় কমে গেছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন বলেন, তীব্র গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকায় পড়তেই পারছি না। বিশেষ রাতে লেখাপড়ার বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর এজিএম (কম) খোরশেদ আলম বলেন, বড়াইগ্রাম উপজেলায় পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ২৮ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৪ মেগাওয়াট, আবার অফ পিকে ২২ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও পাচ্ছি মাত্র ১১-১২ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়ায় বাধ্য হয়েই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।


প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২৪ | সময়: ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ