শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী থেকে কলকাতা ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়ার কথা চলতি বছর ৯মে রাজশাহীর উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এক সভায় জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এটি ছিল তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। আজ সেই ঘোষণা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজশাহী ও ভারতের কলকাতার মধ্যে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু হবে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম ও কলকাতার মধ্যে নতুন বাস সেবা চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শনিবার বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ১৩টি ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রাজশাহী ও কলকাতার মধ্যে নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু হবে।
রাজশাহী অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিনই চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারতে যায়। এ যাত্রায় মানুষকে নানান ভোগান্তিতে পড়তে হতো। বিশেষ করে সীমান্তে নেমে পার হয়ে আবার ট্রেনে উঠা মানুষের জন্য চরম ভোগান্তির কারণ। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মানুষের এই ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে রাজশাহী থেকে ভারতে ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে তিনি কয়েক বছর থেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিভিন্ন সময় রেল মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নানান জায়গায় মেয়র লিটন এ আবেদন করে আসছিলেন। এমন ঘোষণায় রাজশাহী ও আশেপাশের জেলার মানুষের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রা ও বিকাশ ভারতীয় উপমহাদেশের রেলওয়ের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমান বাংলাদেশ রেলওয়ের যে নেটওয়ার্ক রয়েছে তা মূলত অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারত রেলওয়ের খণ্ডিত অংশ। সে সময়ের নেটওয়ার্ক অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে আটটি ইন্টারচেঞ্জ রুট ছিল। কিন্তু ক্রমেই সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।
বিভক্ত বাংলায় ভারতের মালদহ বা মুর্শিদাবাদ হয়েই রেলপথে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিলো রাজশাহী। ১৯৪৭ সালের বিভক্তির পর সেই যোগাযোগ ব্যবস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসাসেবা ও ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে এ অঞ্চলের মানুষকে এখনো ভারতে যেতে হচ্ছে। বিশেষ করে, বহুসংখ্যক অসুস্থ মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রতিদিনই যাচ্ছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। আর এসব বিষয় মাথায় রেখে রাজশাহী-কোলকাতা রুটে ট্রেন সার্ভিস চালু ভিষণ প্রয়োজন হয়ে উঠেছিল।
রাজশাহীবাসী তাদের অভিমতে জানান, রাজশাহী-কলকাতা রুটে ট্রেন সার্ভিস চালু হলে এটি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চিকিৎসা, ভ্রমণ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। দেশের শস্যভাণ্ডারখ্যাত উত্তরবঙ্গের অনেক ফসল রাজশাহী হয়ে রেলপথে ভারতের বাজারে ঢুকতে পারবে। আমদানি-রফতানির জন্য উন্মোচিত হবে নতুন ক্ষেত্র। রাসিক মেয়রের এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।
নওগাঁর পোরশা উপজেলার মশিদপুর ইউনিয়ানের মানিক মণ্ডল জানান, তার কাকি মা ক্যান্সারের রোগি। ভিসা করার পরে ট্রেনে করে গেঁদে গিয়ে আবার সীমান্ত পার হয়ে যেতে ট্রেনে উঠতে হয়। রোগি নিয়ে এমন যাত্রায় বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। এক ট্রেনেই যদি কলকাতা যাওয়া যায় তাহলে বেশ সুবিধাই হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী থেকে কলকাতা সরাসরি ট্রেন ও বিমান যোগাযোগ চালু করা আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিশ্রুতি। এ পথে সরাসরি ট্রেন ও বিমান চালু করতে দীর্ঘদিন যাবত প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। অবশেষে সেই কাঙ্খিত ট্রেন যোগাযোগ চালু হতে যাচ্ছে। ২২ জুন দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে এই রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষণা এসেছে। এই ট্রেন সার্ভিস চালু হলে রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষেরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন, বিশেষ করে যারা চিকিৎসা নিয়ে ভারতে যান, তারা ও তাদের স্বজনরা। আগামীতে রাজশাহী-কলকাতা সরাসরি বিমান চলাচল চালুর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।