শনিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদীতে গভীর রাতে ক্লিনিকের ঝাড়ুদার দিয়ে জিমু খাতুন (১৮) নামের এক প্রসুতিকে প্রসব করানোর ঘটনায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় রোগির আত্মীয়-স্বজন প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার চাইলে ক্লিনিকের নিজস্ব সন্ত্রাসী রকি বাহিনী দিয়ে তাদের আটক করে রাখা হয়। শুক্রবার মধ্যরাতে ঈশ্বরদী শহরের হাসপাতাল রোডস্থ জমজম ক্লিনিক এন্ড স্পেসালাইড্ হসপিটালে এ ঘটনা ঘটে।
গৃহবধূ জিমু লালপুর উপজেলার মাঝগ্রাম গ্রামের সাইদুর রহমানের স্ত্রী। জিমু খাতুনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জোরপূর্বক রেফার্ড করে জমজম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় জিমুর স্বামী সাইদুর রহমান বাদি হয়ে হাসপাতালের মালিক ডা. নাফিসা কবির, ঝাড়ুদার পারুল (৩২), আয়া সাথী (৩৬) ও কর্মচারী রকি (৩২) কে আসামী করে ঈশ্বরদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সাইদুর রহমান বলেন, আমার অন্তঃসন্তা স্ত্রীকে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার সময় জমজম হাসপাতালে এনে ডা. নাফিসা কবীরকে দেখাই। তিনি ইসিজি ও আলট্রাসনোগ্রামসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে জানান সব স্বাভাবিক আছে। নরমাল ডেলিভারী হবে বলে ভর্তি করে এবং ৩ ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক ডেলিভারির সম্ভাবনা আছে। এরপর ডাক্তার বাড়ি চলে যান। রাত ৩টার দিকে প্রসূতির তীব্র ব্যথা শুরু হলে তাকে ডেলিভারির জন্য ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ডা. নাফিসা কবীর হাসপাতালে ছিলেন না। তার নির্দেশে ঝাড়ুদার পারুলের নেতৃত্বে ডেলিভারি করানো হয়। সে সময় তার যৌনাঙ্গের সাইড কাটা হয়। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। সেখানে তরিঘড়ি করে ১৬টি সেলাই দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পর আমাকে বলা হয় মৃত সন্তান হয়েছে। এরপর ডা. নাফিসা কবীর হাসপাতালে এসে একই কথা বলেন। তখন প্রতিবাদ জানালে তাদের একটি কক্ষে আটক রাখা হয়।
সাইদুর রহমান আরও বলেন, ডাক্তার ডেলিভারি করালে সন্তান মৃত হতো না। প্রসূতির অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ডাক্তারের গাফিলতিতে ঝাড়ুদার দিয়ে কাঁটাছেড়া করার কারণেই আমার সন্তান মারা গেছে এবং আমার স্ত্রীর অবস্থা আশংকাজনক।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের মালিক ডা. নাফিসা কবীরকে সংবাদকর্মীরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কাছে বক্তব্য দিয়েছি। এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলতে চাই না।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, ঘটনাটা খুবই দুঃখজনক। আমি ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি এবং পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও ডা. নাফিসা কবীরের ওই জমজম ক্লিনিক এন্ড স্পেসালাইড্ হসপিটালে তার অনুপস্থিতিতে ডেলিভারীর ঘটনায় একাধিক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ না হওয়ায় একের পর এক এ ধরণের দুর্ঘটনা ঘটছে।