লড়াই করে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাংলাদেশের হার

স্পোর্টস ডেস্ক: অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিধর দলের বিপক্ষে ফল কেমন হতে পারে? এমন প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছিল, ঠিক তখন মাঠে বাংলাদেশ কিন্তু দারুণ লড়াই করেছে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৬০ ধাপ এগিয়ে থাকা দলটির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে লড়াই করে ২-০ গোলে হেরেছে।
আগে শেষ তিনটি ম্যাচে ৫-০, ৪-০ ও ৭-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই তুলনায় আজ কিংস অ্যারেনাতে ভেজা মাঠে অস্ট্রেলিয়ার একের পর এক আক্রমণ নস্যাৎ করে হাভিয়ের কাবরেরার দল মাত্র দুই গোল হজম করেছে।
বৃহস্পতিবার কিংস অ্যারেনাতে নিয়মিত অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া একাদশে নেই। চোট কাটিয়ে শেখ মোরসালিন ও তারিক কাজী ফিরেছেন। ৫-৩-২ ছকে খেলে বাংলাদেশ ২৮ মিনিট পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে ঠেকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এরপরের মিনিটে নিজেদের ভুলে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে।
হাইলাইন ডিফেন্স খেলে বাংলাদেশের রক্ষণভাগে একের পর এক পরীক্ষা নিয়েছে সকারুরা। গতি কিংবা টেকনিকেও অনেক এগিয়ে। তাদের দীর্ঘদেহী খেলোয়াড়রা সেটপিস কিংবা আক্রমণ থেকে গোল করার চেষ্টা করেছে। তাদের গোলকিপার জো গাউচি যিনি কিনা অ্যাস্টন ভিলায় এমিলিয়ানো মার্টিনেজের ছায়া হয়ে থাকেন, আজ অনেক সময় জুড়ে ছিলেন হাফ লাইনের একটু পেছনে। নিজেদের হাফে প্রতিপক্ষের আক্রমণ নস্যাৎ করেছেন তপু-মিতুলরা।
মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ প্রতি আক্রমণে সকারুদের সীমানায় গেলেও গোলকিপার জো গাউচিকে পরীক্ষা নিতে পারেনি। তবে নিজেদের ভুলে প্রথমার্ধে ও বিরতির পর তাদের হেডে দুই গোলই সর্বনাশ হয়ে দাঁড়ায়। ম্যাচের ১২ মিনিটে রায়ান স্ট্রেইনের কর্নারে সতীর্থ খেলোয়াড়কে হেড করতে দেননি মিতুল মারমা। হাত উঁচিয়ে বিপদমুক্ত করে দলকে ম্যাচে বাঁচিয়ে রাখেন।
১৭ মিনিটে ইরানকুন্ডার শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। ২৯ মিনিটে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। নিজেদের ভুলে, আত্মঘাতী গোলে। কিছু বুঝে উঠার আগেই গোল! প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে আজদিন রাসটিকের জোরালো শট ডিফেন্ডার মেহেদী হাসান মিঠু ডি বক্সের লাইনে থেকে পা দিয়ে ক্লিয়ার করতে পারেননি, বলের গতিপথ বদলে সোজা জড়িয়ে যায় জালে। গোলকিপার মিতুল মারমা বুঝতেই পারেননি মিঠুর পায়ে লেগে বলের গতি বদলে তার বিপরীত দিক দিয়ে জাল স্পর্শ করবে!
৩৩ মিনিটে বাংলাদেশ বলার মতো সুযোগ পায়। রাকিব হোসেন বক্সের বাইরে থেকে এমন এক শট নিলেন, তা পোস্টের অনেক দূর দিয়ে গিয়ে সবাইকে হতাশ করে। গোলকিপারের কোনও পরীক্ষাই হলো না। বিরতির আগে রাকিব হোসেন প্রতি আক্রমণে বল পেয়ে ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারতেন। কিন্তু হয়নি।
বিরতির পর ৫১ মিনিটে মোহাম্মদ সোহেল রানার জায়গায় জামাল মাঠে নামেন। গ্যালারিতে উল্লাস। দুই মিনিট পর জামালের ক্রসে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তবে মোরসালিন পাওয়ার আগেই এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করেন। ৫৭ মিনিটে ইরানকুন্ডার শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।
৫ মিনিট পর অস্ট্রেলিয়া ব্যবধান দ্বিগুণ করে। জর্দান বসের কর্নারে কুসিনি ইয়েংগি লাফিয়ে উঠে গোলকিপারের ডান দিক দিয়ে জড়িয়ে দেন জালে। ইয়েংগিকে মার্কিংয়ে রাখা মেহেদী মিঠু আগেই লুটিয়ে পড়লে লক্ষ্যে হেড নিতে সহজ হয়। ৭১ মিনিটে আদাম টাগার্টের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে গেলে স্কোরলাইন বাড়েনি।
৮৮ মিনিটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এক দর্শক মাঠে ঢুকে হ্যারি সটারকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে তার সামনেই পড়ে যান। সটার আবার লেস্টার সিটিতে হামজা চৌধুরীর সতীর্থ। তবে নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে দ্রুত মাঠ থেকে বের করে দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
মাঝে বাংলাদেশ দলে চারটি পরিবর্তন হয়। তারপরও প্রতি আক্রমণ থেকে অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপারকে কোনও পরীক্ষাই নিতে পারেনি স্বাগতিকরা। প্রায় সময় জুড়ে নিজেদের অর্ধে থেকে বল ঠেকাতে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। তারপরও দুই গোলে হারটি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বাংলাদেশ অন্তত লড়াই করেছে।
গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া ৫ ম্যাচের সবকটিতেই জিতে শীর্ষেই থাকলো। সমান ম্যাচে আগের এক পয়েন্ট নিয়ে রইলো বাংলাদেশ। ১১ জুন কাতারের দোহাতে শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ লেবানন।
বাংলাদেশ একাদশ: গোলকিপার: মিতুল মারমা; রক্ষণভাগ: তপু বর্মণ, মেহেদী হাসান মিঠু, ইসা ফয়সাল(রহমত মিয়া, সাদ উদ্দিন(শাকিল আহমেদ) ও তারিক কাজী(রিমন হোসেন); মধ্যমাঠ: মোহাম্মদ হৃদয়, সোহেল রানা (চন্দন রায়) ও মোহাম্মদ সোহেল রানা (জামাল ভূঁইয়া); আক্রমণ: শেখ মোরসালিন ও রাকিব হোসেন।


প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৪ | সময়: ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ