ই-পেপার
সর্বশেষ সংবাদ :

এক বিদ্যালয় দুই প্রধান শিক্ষক

আক্কেলপুর প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এক বিদ্যালয়ে দুই প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। এমনই চিত্র দেখা গেছে উপজেলার তিলকপুর আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে প্রধান শিক্ষককে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে অপর একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন সভাপতি। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকের বরখাস্ত বিধি মোতাবেক হয়নি দাবি করে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন আগের প্রধান শিক্ষকই। তাহলে কে আসল প্রধান শিক্ষক? এমনই প্রশ্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
মঙ্গলবার ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসে দায়িত্ব পালন করছেন আমিরুল ইসলাম সুইট। আবার ঠিক তার পাশের কক্ষে বসে আবুল কালাম আজাদ নামের আরেকজন শিক্ষক তিনিও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবি করে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পড়েছেন বিভ্রান্তিতে।
সরকারি বিধি ভঙ্গ করে প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে নিয়ম না মেনে অন্য শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন সভাপতি, বলে জানিয়েছেন ইউএনও। আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং ওই বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিলকপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম আজাদ দীর্ঘ ১১ বছর থেকে ওই বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আর্থিক সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম সুইটের সাথে বনিবনা হচ্ছিলনা তার। এর জের ধরে গত ৬ মাস থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকের চেক স্বাক্ষর করছিলেন না সভাপতি। কিছুদিন পর প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম গত ১০ বছর ধরে ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ এনে তাকে গত ৬ মার্চ সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন। তবে বরখাস্ত করার পূর্বে বিধি অনুযায়ী কারণ দর্শানো নোটিশ, কমিটি গঠন করে অভিযোগ তদন্ত এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এমনকি বিষয়টি রেজুলেশনভুক্তও করেননি সভাপতি। পরে বিদ্যালয়ের ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে ১৭ এপ্রিল স্মারক নম্বর ছাড়াই একটি চিঠি দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন সভাপতি। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও সেই বিধি মান্য করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে তাকে বিধি ভঙ্গ করে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ দেন আমিরুল ইসলাম সুইট। পরে ইউএনও উভয় পক্ষকে ডেকে উপজেলা চেয়ারম্যান মোকছেদ আলী মন্ডলের উপস্থিতিতে বরখাস্ত পক্রিয়া বিধি সম্মত হয়নি জানিয়ে সভাপতির বরখাস্ত কার্যক্রম অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে আমিরুল ইসলামকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগটি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন ইউএনও।
প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম সুইট বলেন, আমার বিরুদ্ধে সভাপতির আনীত অভিযোগগুলো সত্য নয়। প্রতিষ্ঠান থেকে আমারই উল্টো ৭২ হাজার টাকা পাওনা আছে। সভাপতির বিভিন্ন অনিয়মে আমি সঙ্গ না দেওয়াই আমাকে প্রতিষ্ঠান থেকে বাহির করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ এনে বিধি বহির্ভূতভাবে বরখাস্ত করেছে। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও ইউএনও স্যারের নির্দেশে আমি দায়িত্ব পালন করছি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। তাই আমি দায়িত্ব পালন করছি। এর বেশি কিছু জানি না।
সভাপতি শহীদুল ইসলাম আজাদের ভাষ্য, দীর্ঘ ১০ বছর থেকে তিনি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। তিনি অনেক বেপরোয়া হয়ে যাওয়াই তাকে থামাতে সাময়িক বরখাস্ত করে আবুল কালাম আজাদ সাহেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সাময়িক বরখাস্ত বিধি সম্মত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরখাস্ত বিধি সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তবে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করে ইউএনও সাহেবকে জানানো হয়েছে।
৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজিফা সুলতানা বলেন, আমাদের স্কুলে হেড স্যার নিয়ে একটি ঝামেলা চলছে। সুইট স্যার আগে থেকেই হেড স্যার ছিলেন। কয়েক মাস থেকে দেখছি আজাদ স্যারও হেড স্যারের দায়িত্ব পালন করছেন বিষয়গুলো বুঝতে পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, এক প্রতিষ্ঠানে দুইজন ব্যক্তি প্রধানের দায়িত্ব পালন করায় আমরা পাঠদানে বিভ্রান্ত হচ্ছি। এতে শিক্ষার পরিবেশ ব্যহত হচ্ছে। অতি দ্রুত বিষয়টি সমাধান না করতে পারলে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাবেদ ইকবাল হাসান বলেন, একই প্রতিষ্ঠানে দুইজন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের কোন সুযোগ নেই। সভাপতি যেটি করেছেন সেটি বিধি বহির্ভূত। আমিরুল ইসলামই প্রধান শিক্ষক এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত পক্রিয়া বিধি সম্মত হয়নি। হটকারিতার মাধ্যমে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। আমিরুল ইসলামকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হলে তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্য কারও দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই।


প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৪ | সময়: ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর