পদোন্নতি পেলেন হিজাব-নিকাব কান্ডে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সেই রাবি শিক্ষক

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীদের হিজাব-নিকাব খুলতে বাধ্য করা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমানকে গত ১২মার্চ পাঁচ বছরের জন্য সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে এই শাস্তির তিন মাস না পেরতেই অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন তিনি। সোমবার (৩ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩১ তম সিন্ডিকেট সভায় তাকে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

 

 

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি বলছেন এটা স্বাভাবিক। তাকে শুধু অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে মন্তব্য করেছেন।

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, সে (ড. হাফিজুর) মুসলমানদের ধর্মকে অবমাননা করেছে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার দরকার ছিল। তবুও বিভাগের নির্ধারিত শাস্তিকে আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো, তার সকল প্রকার প্রমোশন বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু আমার বিভাগ কীভাবে তার জন্য সুপারিশ করে? আমি খুবই লজ্জিত এইরকম শিক্ষক পেয়ে, যারা তাদের মেয়েদের সম্মান রাখতে জানে না।

 

 

এবিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বলেন, বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির পক্ষ থেকে তার পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছিলো। এর আগে, তাকে অব্যাহতির সুপারিশও করা হয়েছিলো। সিন্ডিকেট এখনো অব্যাহতির সুপারিশটা গ্রহণ করেনি বা, কিছু জানায়নি। তারা গতকালই ঘটনাটির তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেছে বলে শুনলাম। পাশাপাশি পদোন্নতিও দিয়েছে। এটা এখনো অফিসিয়ালি জানিনা, শুনেছি বিভিন্ন মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ীই সব হয়েছে।

 

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিভাগ উল্লেখ করে দিয়েছে যে, তাকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার মানে, বাকি কাজে সমস্যা নেই। তাছাড়া, বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির পক্ষ থেকেই তার পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা হয়েছিলো। এখানে তার পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।

 

 

এর আগে গত সোমবার (১১ মার্চ) সকালে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করে ওই শিক্ষকের বিচারের দাবি জানান।

 

ওই ছাত্রী ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের কাজ কী? অবিবাহিত লুচ্চা শিক্ষকদের কেন ক্লাস দেওয়া হয় যারা বোরকা এবং হিজাবের মতো এতো সেনসিটিভ একটা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে? ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক হয়ে তার এই সাহস কীভাবে হলো? নেকাব খুলতে বাধ্য করা, পর্দাশীন মেয়েদের হেনস্তা করা, মাথা থেকে পা পর্যন্ত প্যাকেট হয়ে এসেছো বলা, ট্যুরের নাম দিয়ে নিয়ে গিয়ে বাংলা-হিন্দি গানে নিজে নাচা ও ছাত্রীদের নাচানো, এসব কিছু এই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা কীভাবে করে? সংখ্যাটা যদি কমও হয়, অন্য শিক্ষকরা কি এতটাই জিম্মি তাদের কাছে? নাকি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ইসলামি ভাবধারার বাইরের শিক্ষক বেশি? এই শিক্ষককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বলছি তোমরা এক হও। এসকল বেয়াদব শিক্ষকদের সকল ইয়ারে ক্লাস থেকে বিরত রাখার দাবি জানাচ্ছি। চেয়ারম্যান স্যার এবং ডিনস স্যারের কাছে এর একটা সুষ্ঠু ফয়সালা কামনা করছি।

পরে বিকেলে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. হাফিজুর রহমান দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন থেকে ওই শিক্ষকের শাস্তি চেয়ে দুই দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকালে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন। পরে দুপুরে অনুষ্ঠিত একাডেমিক সভায় অভিযুক্ত শিক্ষকড. হাফিজুর রহমানকে পাঁচ বছরের জন্য সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৪ | সময়: ৬:০৪ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine