চা শ্রমিকদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে: প্রধানমন্ত্রী

সানশাইন ডেস্ক: চা বাগানের শ্রমিকদের যাতে আর ভাসমান অবস্থায় থাকতে না হয়, তারা যাতে ভালোভাবে বসবাস করতে পারে, তার সব ব্যবস্থা সরকার ‘করবে’ বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কেবলমাত্র অধীনস্ত হিসেবে বিবেচনা না করে চা শ্রমিকদের প্রতি আন্তরিক ও যত্নবান হতে বাগান মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় চা দিবসের অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন সরকারপ্রধান। চা দেশের মানুষের ‘আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিতে’ সহায়তা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “চা শ্রমিকদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করা হবে। শ্রমিকদের প্রতি বেশি যত্নবান হলে তারা বেশি করে কাজ করতে পারবেন।
“শুধুমাত্র তাদেরকে আপনার অধীনস্থ বলে বিবেচনা করলে হবে না। মনে রাখতে হবে তাদের শ্রম, ঘাম দিয়েই আপনার উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উপার্জনের পথ করে দিচ্ছে। কাজেই শ্রমিকদের প্রতি আপনাদের আরও যত্নবান হতে হবে।”
চা শ্রমিকদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, তাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা, তাদের নানা ধরনের অসুবিধা দূর করার দিকেও দৃষ্টি দিতে বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “এখন আমাদের চা চাষ বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছে। যেখানে আমাদের সামান্য চা উৎপাদন হত, সেখানে উৎপাদন বেড়েছে। উত্তরাঞ্চল চায়ের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেটাকে সম্প্রসারণ করা, যত্ন করা, কীভাবে আরো চা উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
“পঞ্চগড়ে আঙ্গিনাতেও চা হচ্ছে, তারা সেখানে তরকারি লাগায়, চায়ের গাছও লাগায়। পঞ্চগড়ের পাশাপাশি লালমনিরহাটেও চা বোর্ডের স্থায়ী অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া চা বোর্ড ক্ষুদ্র চাষিদের প্রযুক্তি সহায়তা, প্রণোদনা, সব দিক থেকে সরকার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।”
দেশের মানুষের চায়ের চাহিদাও যে বেড়েছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যা উৎপাদন করি তাতে রপ্তানির জন্য খুব বেশি একটা থাকে না। বাংলাদেশের মানুষ খুব বেশি চা খেতে পছন্দ করে।”
৯৬ সালে সরকার গঠনের পর চা শিল্পের জন্য নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন বিদ্যুৎ ছিল না। ৩/৪ ভাগ মানুষ শুধু বিদ্যুৎ পেত। সেই সময় চা বাগানে যাতে উৎপাদন ব্যহত না হয়, শুধু চা বাগান নয়, আমাদের শিল্প কলকারখানা যাতে ভালোভাবে চলে, তখন জেনারেটর ওপর থেকে ট্যাক্স তুলে দিয়েছিলাম, যাতে সহজভাবে কিনতে পারে।
“কাজী শাহেদ সাহেবকে ডাকলাম। তিনি খুব উদ্যোগী মানুষ ছিলেন। তিনি সেখানে খাম্বা বানাতেন। আমি বললাম, বিদ্যুৎ নাই খাম্বা দিয়ে কী করবেন। আপনি এখন চা বানান। উনাকে ধরিয়ে দিলেই কাজে লেগে যান। সরকারিভাবে হবে না। আপনাকে উদ্যোগ নিতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বিরোধী দলে থাকতেও তাকে অনুরোধ করেছিলাম। তারপর সরকারে আসার পর যা যা সুবিধা দরকার দিয়েছি। সত্যি চা বাগান হল। এখন পুরো উত্তরবঙ্গের সবখানে চা বাগান হচ্ছে। পঞ্চগড়ে সফল হওয়ার পরে ঠাকুরগাওয়ে চা বাগান, দিনাজপুরে চা বাগান, নীলফামারী, রংপুরের কিছু অংশ, লালমনিহাটও চলে গেছে, কুড়িগ্রামেও। যদিও কুড়িগ্রামে অনেক নদী, উঁচু জায়গা খুবই কম, তারপরও সেখানেও চেষ্টা করা হচ্ছে।”
চা উৎপাদনের তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে ২০২৩ সালে দেশের চা বাগানগুলোতে ১০২.৯২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে ১৬৮টি বৃহৎ চা বাগান এবং প্রায় ৮ হাজার ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে। চায়ের নিলাম চট্টগ্রামের পাশাপাশি এখন সিলেটেও হচ্ছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও চা শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছিলেন, সে কথাও অনুষ্ঠানে বলেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু’র সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সংসদীয় কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি, বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম বক্তব্য দেন।


প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৪ | সময়: ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ