সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
মান্দা প্রতিনিধি: বর্ষা মৌসুমের ৪মাস নৌকায় আত্রাই নদী পারাপার হন এলাকার মানুষ। আর বছরের ৮মাস তাদের ভরসা ইজারাদারের তৈরি করা বাঁশের সাঁকো। এভাবেই নওগাঁর মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন আত্রাই নদী পারাপার হচ্ছেন অন্তত ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী, স্বাধীনতার ৫২বছর পেরিয়ে গেলেও গুরুত্বপূর্ণ এ খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়নি। এতে করে কৃষিপণ্য পরিবহণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় কৃষকদের। অন্তত ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে হাসপাতালে নিতে হয় মুমূর্ষু রোগিদের। একটি সেতুর অভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন আশপাশের ৫ ইউনিয়নের অন্তত দেড় লাখ মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রসাদপুর খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণের জন্য কয়েকদফা জরিপ করা হয়েছে। কিন্তু ডিজাইন ও নেভিগেশন জটিলতার কারণে সেতুটির নির্মাণ প্রক্রিয়া থমকে ছিল। এরই মধ্যে সেই জটিলতা কেটে গেছে। খুব শিগগিরই সেতুটি একনেকের সভায় অনুমোদন পাবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আত্রাই নদী মান্দা উপজেলাকে মুলত দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে সেই আদিকাল থেকে। এ উপজেলার অন্তত ৪০ কিলোমিটার এলাকার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এ নদী। নদীর দুধারে গড়ে উঠেছে বড়বড় অনেক হাটবাজার। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে নদী পারাপারে মানুষের একমাত্র ভরসাই হচ্ছে নৌকা ও বাঁশের তৈরি সাঁকো।
এর মধ্যে উপজেলা সদরের সঙ্গে নদীর উত্তর-পূর্ব এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের সহজ পথ হচ্ছে প্রসাদপুর খেয়াঘাট। এ খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণ হলে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ অফিসগামী লোকজনের ভোগান্তি কমে যাবে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। কৃষকেরাও তাদের উৎপাদিত পণ্য প্রসাদপুর হাটসহ আশপাশের হাটগুলোতে সহজেই পরিবহণ করতে পারবেন।
উপজেলার গাড়ীক্ষেত্র গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, সরকারী-বেসরকারী অফিস, ব্যাংক-বীমা ও বেশকিছু স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আত্রাই নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। এসব কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে আত্রাই নদীর প্রসাদপুর খেয়াঘাট পার হয়ে উপজেলা সদরে আসতে হয়। বর্ষা মৌসুমে একবার পার ধরতে না পারলে অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা।
খুদিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, রাতে মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। চার্জারভ্যান কিংবা অটোরিকশায় ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে হাসপাতালে নিতে হয় রোগীদের। সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিতে না পারায় পথেই অনেকের মৃত্যুর নজির রয়েছে। মন্ত্রী-এমপিরা অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি প্রসাদপুর খেয়াঘাটের সেতু।
উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী বলেন, সেতুটি নির্মাণ করা হলে সাতবাড়িয়া মোড় হয়ে গনেশপুর, মৈনম ও কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের লোকজন মহাসড়ক ব্যবহার না করেই সহজেই উপজেলা সদরে পৌঁছাতে পারবেন। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুল ইসলাম মিঞা বলেন, প্রসাদপুর খেয়াঘাটের ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিগগিরই এটির অনুমোদন হবে। এরপর সেতুটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হবে।
জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম ব্রহানী সুলতান মামুদ গামা বলেন, নেভিগেশন জটিলতার কারণে সেতুটি ফাইলবন্দি অবস্থায় ছিল। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যোগাযোগ করেছি। সেই জটিলতা এখন কেটে গেছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি একনেকের সভায় সেতুটি নির্মাণের জন্য অনুমোদন পাবে।