সর্বশেষ সংবাদ :

মসলার বাজার উত্তাপ ছড়াচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার: কোরবানীর আগে অস্থির হয়ে উঠেছে মসলার বাজার। পুরো মসলার বাজারই এখন সিন্ডিকেটের কবলে। সপ্তাহ ব্যবধানে জিরা, এলাচ ও লবঙ্গের মতো মসলার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। অথচ এসব মসলা আমদানি হয়েছে তিন থেকে চার মাস আগে। চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত আমদানি হওয়ায় এ মুহূর্তে বাজারে মসলার কোনো সংকট নেই বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা। এরপরও মসলার প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি মসলা ৫০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই চাল-ডাল-আটাসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সে তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে এলাচ দানা, জিরা, লবঙ্গ, মরিচ, হলুদ, ধনিয়াসহ বিভিন্ন প্রকারের মসলা।
কোরবানিতে মসলার চাহিদা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি থাকে। সেই চাহিদা পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। রাজশাহীর সাহেব বাজারে খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে অভিযান পরিচলনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর পরেও কমেনি মসলা জাতীয় পণ্যের দাম।
রাজশাহীর সাহেব বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও ডলারের দাম বাড়ার কারণে এখন মসলার দাম অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তাদের দাবি অনুযায়ী মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ছে দুই কারণে। প্রথমত, দেশে এখন চলছে ডলার সংকট। ডলারের অভাবে এলসি করা যাচ্ছে না। একইভাবে বেড়েছে ডলারের দামও। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারেও। অথচ কোরবানীর মসলা দুই তিন মাস আগে থেকেই মজুদ করে রেখেছে ব্যবসায়ীরা বলছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
সোমবার রাজশাহীর সাহেব বাজারে বড় দানার ভালো মানের প্রতি কেজি এলাচ চার হাজার থেকে চার হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে এই এলাচের কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৫০০ টাকায়। ছোট দানার প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৮০০ থেকে চার হাজার টাকায়। গত সপ্তাহে একই মানের এলাচ তিন হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে লবঙ্গের দাম ছিল এক হাজার ৮০০ টাকা। সোমবার একই লবঙ্গ বিক্রি হয়েছে তিন হাজার টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লবঙ্গের দাম বেড়েছে এক হাজার ২০০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৫৫৭ টাকায়, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। গত সপ্তাহে যে গোলমরিচ প্রতি কেজি ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, এখন তা ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দারুচিনি ৭০০ টাকা, হলুদ ৩৫০ টাকা, কালিজিরা ৪০০ টাকা, কিশমিশ ৮০০ টাকা, তেজপাতা ১২০ টাকা আর সাদা সরিষা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি জয়ত্রী বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকায়।
ঈদ শব্দের অর্থ খুশি অথচ এদেশে সাধারণ জনগণের কাছে ঈদ মানেই অতিরিক্ত খরচ। কোনো ভাবেই যেনো বাজারের কালো সিন্ডিকেট বন্ধ করা যাচ্ছে না।
চাকুরিজীবী আমির ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই কোরবানীর আগে ব্যবসায়ীরা নিজেদের অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য মসলার দাম বাড়িয়ে দেয়। কারণ তারা জানেই কোরবানীতে মসলা একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। কোরবানীর গোশত খাওয়ার জন্য সবাইকে মসলা কিনতে হবেই। তারা সাধারণ জনগণকে এক প্রকার জিম্মি করে ব্যবসা করছে। এদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এবং সরকারকে সিজনাল সময়গুলাতে চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম তুলনামুলকভাবে কম রাখা উচিত। অথচ তারা করে উল্টোটি।
ভারতের রপ্তানির ঘোষণার পরও বাজারে কোথাও পণ্যের দাম কমার লক্ষণ নেই। বরং প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। পাইকারি বাজারে ভালোমানের ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়। আর খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। যা আগে ছিল ৭০ টাকার নিচে। পাইকারি বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকার বেশি দামে। খুচরা বাজারে দেশীয় পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৭৫ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে মানভেদে পাঁচ টাকা কম-বেশি।
কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণে মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করা হয়েছে। মূলত ভারত থেকে জিরা ও এলাচ, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও গুয়েতেমালা থেকে দেশে লবঙ্গ ও দারুচিনি আমদানি করা হয়। এতদিন এসব দেশে উৎপাদন কম হওয়ার অজুহাত দেখালেও এখন এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি।
সাহেব বাজারের মসলা ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু মসলার দাম বেড়েছে। মসলাকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এ পণ্য আমদানিতে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি শুল্ক দিতে হয়। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ায় মসলার বাজার চড়া। এ কারণে এলাচসহ সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজামান সম্প্রতি রাজশাহীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীরা তিন মাস আগ থেকে এলসি খুলে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে মসলা আমদানি করেছেন। সেটি এখন বাজারে মজুদ রয়েছে। তাই এখন ইচ্ছে করলেই এলসির অজুহাতে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এরপরও যদি কেউ দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজশাহী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে কোথাও কোনো ব্যবসায়ী পণ্য মুজুদ করে কোনো সিন্ডিকেট করছে কিনা সে বিষয়ে তদারকী করা। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি এই রকম অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ থাকে তাহলে আমাদের নিয়মিত অভিযানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, বাজারের পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের না। মুক্ত বাজারে কোনো পণ্যের দামে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করলে সেইটার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।


প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৪ | সময়: ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর