মঙ্গলবার, ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, শিবগঞ্জ: ভারত থেকে আমদানীকৃত পণ্য প্রতারণার মাধ্যমে ট্রাকে ভূয়া নম্বরপ্লেট লাগিয়ে নিজেদের নাম পরিচয় গোপন করে আমদানীকৃত পণ্য আত্মসাতের অভিযোগে ৩ জনকে মেহেরপুর, গাজিপুর ও টাঙ্গাইল থেকে আটক করেছে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় গত ৩ মে বিকেলে ছিনতাই হওয়া এক ট্রাক ভারতীয় পণ্য খৈলের কিছু অংশ, খৈল বিক্রির টাকা ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এর ট্রাক চালক পলাতক রয়েছে।
সোমবার বিকেলে শিবগঞ্জ থানায় এক প্রেস বিফিং-এ এ তথ্য নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবাবগঞ্জ সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম।
প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয়, মেসার্স মদীনা ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক ভারত থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ২৮৬ বস্তা খৈল আমদানী করেন। যার চালান নম্বর-৯৮০৩৯। আমদানীকৃত ঐ খৈল জেআর এন্টারপ্রাইজ নামক ট্রান্সপোর্ট অফিসের মাধ্যমে ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট-২০-০১৫৩) ভাড়া করে গাজীপুরের কর্ণপুর এগ্রোফিড নামক স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন শাহবাজপুর ইউনিয়নের শিয়ালমারা গ্রামের মৃত আজাহার আলীর ছেলে কদির আলী (৫০)। ভূয়া নম্বরপত্র ও নিজের সম্পর্কে ভূয়া তথ্য দিয়ে সোনামসজিদ বন্দর থেকে পণ্য গাজিপুরে আনার সময় পথে ট্রাক চালক ঝিনাইদহ জেলার হলিধানী গ্রামের বিল্লাল হোসেন ট্রাকের নম্বরপ্লেট খুলে ফেলে টাঙ্গাইলের কালিহাতি ও গাজিপুরের বাসন এলাকার মের্সাস শাহ এন্টারপ্রাইজে ১৫ টাকা কেজি দরে সম্পূর্ণ খৈল বিক্রি করে মেহেরপুরে আত্মগোপন করে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ মেহেরপুরে চালকের সহকারী রানা বিশ^াসকে ট্রাক সহ আটক করে। এ সময় চালকের সহকারী রানাকে আটক করা সম্ভব হলেও এর চালক বিল্লাল পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদ শেষে পুলিশ নিশ্চিত হয় মেহেরপুরের একটি ট্রাকের হারিয়ে যাওয়া নম্বরপত্র (ঢাকা মেট্রো ট-২০-০১৫৩) ব্যবহার করে প্রতরণা করেছে আটক ঝিনাইদহ-ট-১১-০৪৬০ নম্বর ট্রাকের চালক বিল্লাল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, গত ১৭ মে চালকের সহকারী রানা আটকের পর সে জিঞ্জাসাবাদ শেষে নিশ্চিত করে তার চালক ২৮৯ বস্তায় থাকা ১৪৬৬০ কেজি খৈল গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় বিক্রি করেছে। এর আগে তারা মেহেরপুর এলাকার একটি ট্রাকের ৩০ এপ্রিল চুরি হওয়া নম্বরপত্র (ঢাকা মেট্রো ট-২০-০১৫৩) ব্যাবহার করে এবং ঐ ট্রাকটির প্রকৃত নম্বরপত্র ঝিনাাইদহ-ট-১১-০৪৬০ তারা খুলে ফেলে।
পরে সোনামসজিদে পণ্য তোলার সময় চালান ফরমে ড্রাইভারের আসল নাম বিল্লাল হোসেন গোপন রেখে পিন্টু নাম ব্যবস্থায় করেন। এ সময় চোরাইকৃত গাড়ীর মূল কাগজপত্র তারা ট্রাকে রেখে দেয়ায় ট্রাকটি সনাক্তে সহজ হয় পুলিশের পক্ষে।
তিনি আরও জানান আটক রানার তথ্যের ভিত্তিতে প্রায় ৬০ টাকা কেজির পণ্য ১৫ টাকা কেজি দরে কেনায় টাঙ্গাইলের কামারগাঁও থেকে খৈল ব্যবসায়ী মমিনুল ইসলাম (৩০) ও পরে ১৯ মে ‘মেসার্স শাহ এন্টার প্রাইজ’র ম্যানেজার ইউনুছ আলীকে একই অভিযোগে গাজীপুরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে ইউনুস তার মালিককে ফাঁকি দিয়ে কম দামে পণ্য কিনে বেশি দামে বিক্রির পর ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা লাভ করে। ঐ লাভের টাকায় সে একটি ভারতীয় মোটরসাইকেল কেনে। পরে পুলিশ খৈল বিক্রির মমিনের কাছের ৭ হাজার ৫০০ টাকা ও ইউনুছ আলীর কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল, ৮০ বস্তা খৈল ও ২ লাখ টাকা জব্দ করে।
জেআর এন্টারপ্রাইজ নামক ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ কেন ভূয়া ট্রাক ও প্রতারক চালক সরবরাহ করল এমন প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিষয়টি নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় জে আর এন্টারপ্রাইজ জড়িত কিনা এবং এর আগে এ ধরনের কোন অপকর্ম হয়েছে কিনা তা তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্ত্রে সংস্থাটির নাম আসলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ৩ মে আমদানীকৃত খৈল ভর্তি ট্রাক নিখোজ হবার পর আমদানীকারক কদির আলী শিবগঞ্জ থানায় গত ১৭ মে একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন।