সর্বশেষ সংবাদ :

‘৩ বছর ধরে এসআইয়ের হয়রানির শিকার’ সেই কলেজছাত্রের পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার: জমি সংক্রান্ত একটি মামলার জেরে তিন বছর ধরে গোদাগাড়ী থানার এসআই আতিকুর রহমান বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন বলে অভিযোগ করেছেন নামের মিলের কারণে জেলখাটা সেই কলেজছাত্রের পরিবার।
এর জের ধরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকায় সুযোগ নিয়ে এসআই আতিকুর কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনকে সোমবার কারাগারে পাঠান বলেও অভিযোগ পরিবারের।
এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও রাজশাহী পুলিশ সুপারের কাছে গোদাগাড়ী থানার ওসি আব্দুল মতিন ও এসআই আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কলেজছাত্রের ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল।
রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, “নামের মিল থাকায় কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সেটি তদন্ত করে দেখব। অভিযোগ সত্য হলে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
মাদক মামলার আসামির নামের সঙ্গে মিল থাকায় কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান এসআই আতিকুর রহমান। কলেজছাত্রের পরিবারের আপত্তি না মানলেও পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুনঃতদন্ত শেষে ‘ভুল করে’ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসমাইল কারাগার থেকে মুক্তি পান।
ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন (২১) গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র। তিনি গোদাগাড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফাজিলপুর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তার মায়ের নাম মোসা. মনোয়ারা বেগম।
অপরদিকে, ৫০ গ্রাম হেরোইন রাখার মাদক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামির নাম ইসমাইল হোসেন (২০)। তিনি একই ওয়ার্ডের লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তার মায়ের নাম মোসা. বেলিয়ারা। আসামি ইসমাইল এখন ভারতে রয়েছেন। তিনি সেখানে বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন।
কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনের ভাই আব্দুল হাকিম রুবেলের অভিযোগ, “২০২১ সাল থেকে এসআই আতিকুর রহমান আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন। সর্বশেষ আমার কলেজ পড়ুয়া ছোটভাই ইসমাইল হোসেনকে ধরে নিয়ে গিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে পরিবারের মান ক্ষুণ্নু করেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে আমার বাবা আব্দুল করিমকে ধরে নিয়ে গিয়ে নাশকতার মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়।”
আব্দুল হাকিম রুবেল বলেন, “২০২১ সালে জমি নিয়ে আমার চাচা গোলাম মোস্তফার সঙ্গে দ্বন্দ্ব হলে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেন। ২০২১ সালের ২০ ও ২২ জানুয়ারি দুইদিন ওই অভিযোগের তদন্তে যান গোদাগাড়ী থানার এসআই আতিকুর রহমান। তদন্তে গিয়ে তিনি আমার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও তাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
“এ সময় তিনি আমাদের উঠিয়ে নিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ২৬ জানুয়ারি এসআই আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দেন আমার বাবা। এরপর আমাদের ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এসআই আতিকুর। এরপর থেকে তিনি আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছেন”, অভিযোগ করেন আব্দুল হাকিম রুবেল।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আতিকুর রহমান বলেন, “জমি নিয়ে ঝামেলার তদন্তে একবার তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেসময় আমার সঙ্গে তৎকালীন ওসি কামরুল ইসলাম ছিলেন। সেদিন আমি নিজে কিছু বলিনি; যা বলার ওসি স্যারই বলেছেন। সেদিন আমার মোবাইল ডিউটি থাকায় সেখানে গিয়েছিলাম।”
কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনকে যে মামলায় রোববার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় সেটি মাদকের মামলা। ওই মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ অগাস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রাতেই তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা করেন ডিবির এসআই ইনামুল ইসলাম। এর পরের দিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এক মাস পর ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল হোসেন জামিনে মুক্তি পান। এরপর তিনি ভারতের চেন্নাই চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার বাবার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। তার বাবা আব্দুল করিম ছয় বছর ধরে চেন্নাই আছেন।
কলেজছাত্র ইসমাইল হোসেনের ভাই আব্দুল হাকিম রুবেল গ্রেপ্তারের বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিকদের বলছিলেন, “আমরা এসআইকে বার বার বলেছি তার নামে কোনো মাদক মামলা নেই। এ সময় তার জাতীয় পরিচয়পত্রও দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সঙ্গে গ্রাম, মাতার নাম ও বয়স মিল নেই সেটিও দেখিয়েছি।”
রুবেল আরও বলেন, “এরপরও এসআই আতিকুর জোরপূর্বক আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যান এবং পরের দিন মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান।”


প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৪ | সময়: ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ