নিষিদ্ধ পলিথিন এখন অপরিহার্য্য পণ্য

স্টাফ রিপোর্টার: পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর বিধান অনুসারে দেশে ২০০২ সাল থেকে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিপণন, পরিবহণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষণার ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বন্ধ হয়নি পলিথিনের ব্যবহার। বাজার থেকে বাড়ি সব জায়গায় পলিথিনের ব্যবহার। বাড়ছে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগব্যাধী। দূষিত হচ্ছে পানি। জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক জীবের মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। পলিথিনের অবাধ ব্যবহারে চরম হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ।
জীবন, প্রকৃতি, পরিবেশ সবার জন্য জন্য হুমকিস্বরূপ পলিথিন। এর ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রি। আইন থাকলেও খোলা ভাবইে বিক্রি হচ্ছে পলিথিন। বাজারে এক কেজি আলু নিতে গেলেও দেয়া হয় পলিথিন। সব জায়গায় পলিথিন এবং নিম্নমানের প্লাস্টিক পণ্য দেদারসে বিক্রি হলেও দেখার যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষও আপন করে নিয়েছে পলিথিন। আবার যেন, পলিথিন একটি পরিবারের জন্য অপরিহার্য্য পণ্য হয়ে উঠেছে। পলিথিন ও প্লাস্টিকের এমন অবাধ ব্যবহার ধিরে ধিরে পৃথিবীর পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় জানা যায়, দেশে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয় তার ৮ শাতংশই প্লাস্টিকের বর্জ্য। দেশে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন দুই হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয় প্লাস্টিকের। প্রতিবছর দেশে ১০ লাখ ৯৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও দেশে এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। কেবল রাজধানী ঢাকাতেই প্রতিদিন অন্তত দেড় কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। শুধু ঢাকা নয়, দেশের অন্য শহরগুলোর পরিস্থিতিও একই। প্লাস্টিক দূষণে অবদান রাখা দেশেগুলোর মধ্যে শীর্ষ ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, বাজারে টিস্যু ব্যাগ বলে একটি ব্যাগের ব্যাপক প্রচলন আছে। দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। এসব ব্যাগ পলিথিনের হলেও কাপড়ের ব্যাগ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্লাস্টিকের ব্যাগ শতকরা ১০০ ভাগই কৃত্রিম পলিথিনের। এসব পলিথিন তৈরি হয় জীবাশ্মের অপরিশোধিত তেল থেকে। যেগুলো খুব সহজেই নষ্ট হয় না। পলিথিন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ বছর সময় লেগে যায়। সে কারণে এর ক্ষতির পরিমানও ব্যাপক।
রাজশাহীতেও পলিথিনের অবাদ ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ কোন দোকান থেকে ১০০ গ্রামের কোন পণ্য কিনলেও তা দেয়া হচ্ছে পলিথিনে করে। এমনকি হাটের শাক-সবজির বিক্রেতারাও গ্রাহকের হাতে তুলে দিচ্ছে পলিথিন।
রাজশাহী নওদাপাড়া হাটের সবজি ব্যবসায়ী সবুজ আলী জানান, দোকান থেকে সবজি কিনে নিয়ে মানুষ ব্যাগ চায়। ৫০০ গ্রাম সবজি যারা কিনতে আসে তাদেরও ব্যাগে করে দিতে হয়। অন্য ব্যাগের তো দাম বেশি। সে কারণে সহজলভ্যে পাওয়া পলিথিন দোকানে রাখতে হয়।
বাজারে মুদির দোকান থেকে শুরু করে সব জায়গায় পলিথিনের অবাদ ব্যবহার। পলিথিন নিষিদ্ধ ও এর উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রি যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ তা অনেকেই ভুলতে বসেছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) তথ্য মতে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৫০ হাজার কোটি প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি করা হয়। সারা বিশ্বে ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে প্রতি বছর। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্যরে ওজন বেশি হবে।
পরিবেশবীদরা জানান, পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করা না হলে ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যেই দেশের অনেক নদীর নিচে পলিথিনের স্তর পড়ে গেছে। এ প্রক্রিয়া চলমান থাকলে আগামী দিনে অনেক নদনদীতে মাছ আর পাওয়া যাবে না।
পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বলেন, পলিথিনের ব্যবহার কমাতে সমন্বিত চেষ্টার প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে পলিথিন ব্যবহারের ভয়াবহতার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
রাজশাহীর সহকারী পরিচালক কবির হোসেন আরো বলেন, রাজশাহী মহানগরীর শহরে পাইকারি দোকানগুলোতে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে থাকি প্রতি মাসে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে রাজশাহী মহানগরীর রেস্টুরেন্টগুলো ও বড় বড় সুপার শপগুলোতে আমরা পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে সরকার আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা মাঠ পর্যায়ে এর প্রতিফলন দেখতে পাবো বলে আশা করছি।


প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৪ | সময়: ৫:১২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ