শুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র ঈদুল আজহার দিন ঘনিয়ে আসছে। ইতোমধ্যেই খামারীরা নিজেদের পালিত গরু বিক্রি করতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। হাট ঘুরতে শুরু করেছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরাও। রাজশাহীতে এবার কোরবানির জন্য সাড়ে চার লাখের বেশি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যা চাহিদার চেয়ে এক লাখ ৪১ হাজার বেশি।
খামারিসহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেড়েছে। জেলাতে এবার যে পরিমাণ পশুর চাহিদা রয়েছে, লালন-পালন করে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে তার চেয়েও বেশি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এবার অন্য জেলারও কোরবানীর চাহিদা মেটাবে রাজশাহীর গরু-ছাগল।
রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এখন পর্যন্ত তাদের কাছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে কোরবানীর চাহিদা আছে তিন লাখ ২৪ হাজার ৯৭৭টি পশু। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা ৮৩ হাজার ৩৬৫টি, মহিষ ৩ হাজার ৭৬৯টি ও ছাগল ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি। ২০২৩ সালের তুলনায় এবারের প্রস্তুতকৃত পশুর সংখ্যা বেশি। গতবারে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৬৪৫টি কোরবানিযোগ্য পশুর নিবন্ধন হয়েছিল।
অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রাজশাহী জেলার চাহিদা মিটিয়ে আরো এক লাখ ৪১ হাজার বেশি পশু থাকবে। এসব পশু আশেপাশের জেলার কোরবানী পশুর চাহিদা মেটাতে পারবে।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে গতবারের তুলনায় কোরবানির পশুর চাহিদা বাড়েনি। কিন্তু পশু পালন বেড়েছে। সে কারণে অনেক উদ্বৃত পশু তৈরি হয়েছে।
খামারীরা জানান, পশু পালনে খরচ বেড়েছে। গো খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ খরচ বেড়েছে। বাহির থেকে গরু আমদানি হলে খারারীরা লোকশানের মুখে পড়তে পারে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী প্রামে আফজাল হোসেন তার বাড়িতে ৩টি ষাঁড় পালন করেছেন। উদ্দেশ্য কোরবানীর বাজারে বিক্রি করা। আফজাল হোসেন বলেন, বছরে অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় কোরবানীর সময়ে পশুর দাম বেশি। ষাঁড়গুলোকে আমি কোরবানীর সময় বিক্রি করবো।
আফজাল হোসেন আরো বলেন, তাদের গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে একটি বা দুটি করে গরু আছে। গ্রামের মানুষ মাঠে কাজ করার পাশাপাশি সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে গরু পালন করে থাকেন। ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হলে তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখবে। আর যদি বাহির দেশ থেকে গরু আমদানি করা হয় বা চোরাই পথে গরু প্রবেশ করে তাহলে দেশী খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বে।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মাসুদ রানা। একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে চাকুরি করেন। তিনিও বাড়িতে এবার দুটি ষাঁড় পালন করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর দুই থেকে তিনটি ষাঁড় পালন করেন কোরবানিতে বিক্রির জন্য। এবারও তার গোয়ালে ষাঁড় রয়েছে। বর্তমানে ষাঁড় দুটির দাম প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার থেকে আড়াই লাখের মধ্যে। দুই বছর আগে শুধু ৯০ হাজার টাকা কিনেছিলাম ওই দুইটি ষাঁড়।
খামারী মাসুদ রানা আরো বলেন, বর্তমান অবস্থায় বাজারে ৭৫০ টাকা কেজি গরুর মাংস। অতীতের তুলনায় সর্বোচ্চ দাম। সেই হিসেবে কোরবানিতে গরুর দাম বেশি হওয়ার কথা। আমরা যে খাবারগুলো গরুকে খেতে দিয়েছি তার সবগুলোরই দাম বেশি আগের তুলনায়।
এদিকে, কোরবানী উপলক্ষ্যে যেভাবে হাট জমে উঠে ঠিক সেভাবে এখনো হাট জমে উঠেনি। দুরের পাইকারী ব্যবসায়ীরা সবে আনাগোণা শুরু করেছে হাটে। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পশু হাট সিটি বাইপাস হাট। ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, সিটি পশুর হাট সপ্তাহে রোববার ও বুধবার বসছে। তবে এখনো কোরবানির পশুর কেনাবেচা সেভাবে শুরু হয়নি। তবে, গরুর সরবরাহ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েছে।
তিনি আরো জানান, গরু হাটে দুর-দুরান্তের পাইকারী ব্যবসায়ীরা আসছে শুরু করেছে। তবে গরু কিনছেন না। দাম যাচাইয়ে বেশি ব্যস্ত তারা।