বাঘা থানায় একমাসে ৩৫ মামলার ২৮টি মাদকের

স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: রাজশাহীর বাঘা সীমান্ত এলাকায় পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে মাদকের প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তথ্য দিয়েছেন পুলিশ। তারা গত এক মাসে মোট ৩৫টি মামলা রেকর্ড করেছে। এরমধ্যে ২৮টি মাদক। এ নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপজেলা মাসিক চোরাচালান ও আইন শৃঙ্খলা কমিটি। তবে উল্লেখ যোগ্য মাদক উদ্ধারের জন্য অনেকেই ওসির প্রতি ধন্যবাদ সহ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, রাজশাহীর বাঘা সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা। বহুকাল থেকে এ অঞ্চলে চলে আসছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। অনেকেই বাঘাকে মাদকের রাজধানী বলে অখ্যায়িত করে থাকেন। এখানে ১০-১২টি গ্রাম মিলে প্রায় তিন শতাধিক মাদক চোরাকারবারী রয়েছে। তবে থানায় তালিকা রয়েছে দুই শতাধিক ব্যাক্তির নামে।
এদের মধ্যে দু-একজন এ ব্যবসা থেকে সরে দাড়ালেও অনেকেই এ ব্যবসাটাকে অন্য আরো পাঁচটি ব্যবসার মতো মনে করে রাতা-রাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন।
এ অঞ্চলে যারা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত স্থানীয় লোকজন তাদের একেক জনকে একেক নামে ডাকে ও চেনে। এদের মধ্যে একজন পিতাকে ডাকা হচ্ছে গাঁজার ডিলার এবং ছেলেকে ফেন্সিডিল ও ইয়াবা সম্রাট। এই দুজনের নামে থানায় রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। তারা কখনো-কখনো জেল হাজতে কাটালেও এই মুহুর্তে বাড়িতে অবস্থান করছে এবং চালিয়ে যাচ্ছে মাদক কারবার। এ সীমান্তে প্রতিনিয়ত দেখা যাই, দামি মোটার সাইকেল ও প্রাইভেট কার সহ বহরাগত যুবকদের উপস্থিতি।
এলাকার লোকজন জানান, সামনে রমজানের ঈদকে টার্গেট করে রাজশাহীর বাঘা সীমান্তে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাচালান বানিজ্য। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে প্রতিদিন অনায়াসে চলে আসছে মরণ নেশা হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, মদ ও গাঁজা সহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। যা পারা-পারের জন্য রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চোরাচালান সিন্ডিকেট। এদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৩ শতাধিক। এরমধ্যে রয়েছে কয়েকজন নারী মাদক বিক্রেতা। যারা একাধিকবার আটক হওয়ার পরেও হাজত থেকে বেরিয়ে আবারও গায়ে বাতাশ লাগিয়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে এবং গাড়ি-বাড়ি ক্রয় করা সহ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
বাঘা থানা পুলিশের একটি মুখপত্র জানান, বাঘা সীমান্ত এলাকা। এ অঞ্চলে মাদকের ব্যাপক প্রবণতা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য। তাঁর ভাষ্য মতে, মাদক সহ যাদের আটক করে জেল-হাজতে পাঠানো হয়, তারা অল্প সময়ের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে ফের নতুন করে একই ব্যবসায় সক্রিয় হয়। তবে এ বিষয়ে বাঘা সীমান্তে অবস্থিত দু’টি বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ক্যাম্পের সদস্যরা আরো সক্রীয় হলে এর প্রবনতা কমিয়ে আনা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে বাঘার সুধীজনরা জানান, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগার উপর দিয়ে উপজেলার বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিনই চোরাই পণ্য আসছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে।
বিশেষ করে মীরগঞ্জ, আলাইপুর, হরিরামপুর, কলিগ্রাম ও কিশোরপুর ঘাট এখন চোরাচালানীদের জন্য অনেকটা অভয়ারণ্য। এ সমস্ত ঘাট দিয়ে ভারতীয় নানা প্রকার যন্ত্রাংশ সহ মরণ নেশা হাজার হাজার বোতল ফেন্সিডিল, ইয়াবা, গাঁজা ও হোরোইন অনায়াসে পাচার হয়ে আসছে দেশের অভ্যান্তরে। আর এগুলোর সবই নিয়ন্ত্রন করছেন একটি চোরাচালান সিন্ডিকেট।
বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, বাঘা সীমান্তবর্তী উপজেলা। এখানে অতীতে মাদক ছিলো,এখনো আছে। তবে এটা পুলিশের একার পক্ষে নিরসন করা সম্ভব না। আমরা চেষ্টা করছি এটিকে কমিয়ে আনার।
তিনি গত মাসে মাদক সংক্রান্তে ২৮ টি মামলা দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দেশে অনেক রকম আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। তারাও যদি এ বিষয়ে সক্রীয় হয়, তাহলে বাঘাকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব হবে।


প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৪ | সময়: ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ