রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: রোদ্রৌজ্জ্বল কয়েকটি দিনের পর আবারও আবহাওয়া গুমোট। ধুসর মেঘে ঢাকা মিরপুরের আকাশ। তবে এর চেয়েও বেশি জমে গিয়েছিল সাকিব আল হাসানকে ঘিরে সংশয়ের মেঘ। চোখের সমস্যায় ভুগতে থাকা অলরাউন্ডার কি পারবেন আপন রূপে ফিরতে! ২২ গজেই উত্তর দিয়ে দিলেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডা। খুব বড় কোনো ইনিংস নয় যদিও, তবে এবারের বিপিএলে প্রথমবার উপহার দিলেন তিনি কার্যকর ব্যাটিং। মৌসুমের সেরা বোলিংয়ের জন্য বেছে নিলেন এই দিনটিকেই।
সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দাপুটে জয়ে শীর্ষস্থান আরও সংহত করল রংপুর রাইডার্স। ৬০ রানে হারাল তারা দুর্দান্ত ঢাকাকে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ২০ ওভারে রংপুর রাইডার্স তোলে ১৭৫ রান। ফিফটি করতে পারেননি তাদের কোনো ব্যাটসম্যান। তবে উপযোগী ইনিংস ছিল চার জনের ব্যাটে।
এবারের বিপিএলে নিজের শেষ ম্যাচে বাবর আজম খেলেন ৪৩ বলে ৪৭ রান। একাদশে ফেরার ম্যাচে রনি তালুকদারের ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ৩৯। তিনে নেমে সাকিব করেন তিন ছক্কায় ২০ বলে ৩৪। শেষ ওভারে তিন ছক্কায় মোহাম্মদ নাবি করেন ১৬ বলে ২৯। রান তাড়া কোনো সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি ঢাকা। দুই ওভার বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় তারা ১১৫ রানে।
৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন সাকিব। মাত ম্যাচে পাঁচ জয়ে সবার ওপরেই থাকলল রংপুর। ছয় ম্যাচে পাঁচ হারে তলানিতে ঢাকা। শরিফুল ইসলামের প্রথম বলে রনি তালুকদারের বাউন্ডারিতে শুরু হয় ম্যাচ। প্রথম তিন ওভারে যদিও বাউন্ডারি ছিল ওই একটিই। তার পরই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন রনি ও বাবর আজম। তাসকিনের ওভারে দুটি বাউন্ডারি মারেন দুজন। পরের ওভারে শরিফুলকে টানা তিন বলে দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি মারেন বাবর। প্রথমটি পুল করে, পরেরটি ড্রাইভে, আরেকটি কাট করে। তবে এরপর বাবরকে দর্শক বানিয়ে ঝড়ো গতিতে ছুটে থাকেন রনি। ৬ ওভারে দলের রান স্পর্শ করে ৫০।
আরাফাত সানির বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা মারার পর সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান রনি। আসরের প্রথম চার ম্যাচ মিলিয়ে ৩৭ করার পর একাদশে জায়গা হারিয়েছিলেন তিনি। ফেরার ম্যাচে করলেন ৩৯। তার বিদায়ের পর একটু কমে যায় রংপুরের রানের গতি। বাবর কিছুটা গুটিয়ে নেন নিজেকে। সাকিবও ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারছিলেন না।
সাকিবের রান এক পর্যায়ে ছিল ১৪ বলে ১১। এরপর মোসাদ্দেক হোসেনের একটি শর্ট বল পেয়ে উড়িয়ে মারেন তিনি। একটু জন্য ছক্কা হয়নি সেটি। পরের ওভারে চাতুরাঙ্গা ডি সিলভার বলে উড়িয়ে মারেন এবার। সীমানায় জায়গামতো থাকলে হয়তো ক্যাচ নিতে পারতেন গুলবাদিন নাইব। কিন্তু একটু এগিয়ে ক্যাচ নেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হন তিনি। বল উড়ে যায় সীমানার ওপারে। পরেরটিতে আবার ছক্কায় ওড়ান তিনি।
পরের ওভারে আরেকটি ছক্কা আদায় করে তিনি মোসাদ্দেকের বলে স্লগ সুইপে। পরের বলেই আউট হয়ে যান একই শটের পুনরাবৃত্তির চেষ্টায়। সাকিবের আগেই অবশ্য ওই ওভারে বিদায় নেন বাবর। পাওয়ার প্লে শেষে ইনিংস আর গতিময় করতে পারেননি তিনি। ফর্মে থাকা আজমাতউল্লাহ ওমারজাই ব্যর্থ হন এ দিন। ছন্দে থাকা আরেক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান সোজা ব্যাটে তাসকিন আহমেদের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারলেও পরে বড় শট খেলতে পারেননি।
সব পুষিয়ে দেন মোহাম্মদ নাবি। ইনিংসের শেষ ওভারে তাসকিন তিন ছক্কায় তুলাধুনা করেন তিনি। রান তাড়ায় ঢাকা ধুঁকেছে শুরু থেকেই। অভিষিক্ত ওপেনার সাব্বির হোসেন প্রথম ওভারে স্লিপে নাবির হাতে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েই বিদায় নেন পরের ওভারে। তাকে অনুসরণ করেন তিনে নামা সাইম আইয়ুবও। জীবন পাওয়ার পরের ওভারে আউট হয়ে যান পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। দুবাই দুর্ভাগা বোলারের নাম ওমারজাই, দুবারই সফল বোলার শেখ মেহেদি হাসান।
৪ ওভার শেষে ঢাকার রান ছিল ২ উইকেটে ৪। পরের ওভারে জেগে ওঠেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ওমারজাইকে স্কুপ করে বাউন্ডারির পর টানা দুই বলে ছক্কা মারেন দাপুটে শটে। পরের ওভারে শেখ মেহেদির বলে স্লগ সুইপে চার মারার পর ছক্কায় ওড়ান চোখধাঁধানো রিভার্স সুইপে। তবে অন্য প্রান্তে বেহাল দশা চলতেই থাকে। সাকিব আক্রমণে এসেই বিদায় করেন অ্যালেক্স রসকে।
একাদশ ওভারে বোলিংয়ে এসে সালমান ইরশাদ স্কিড করা বলে ফিরিয়ে দেন নাঈমকে। তিনটি করে চার ও ছক্কায় তার ইনিংস থামে ৩১ বলে ৪৪ রানে। স্লিঙ্গিং অ্যাকশনের পাকিস্তানি পেসার পরে আউট করে চাতুরাঙ্গা ডি সিলভাকেও। এই দুই উইকেটের মাঝে হাসান মাহমুদের এক ওভারে বাজে শটে ফিরে যান গুলবাদিন নাইব ও মোসাদ্দেক হোসেন। শেষ দিকে ইরফান শুক্কুরের ১৫ বলে ২১ রানের ইনিংসে একশ ছাড়াতে পারে তারা।