বুধবার, ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী লেখক পরিষদ ও কবিকুঞ্জের উদ্যোগে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হাসান আজিজুল হক এঁর জন্মদিন পালিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে নগরীর আলোকার মোড়ে অবস্থিত রাজশাহী এসোসিয়েশন ভবনের সম্মেলন কক্ষে ও সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু পরিষদ মহানগর কার্যালয়ে ‘হাসান আজিজুল হক ও তাঁর সাহিত্য ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লেখক পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক রুহুল আমীন প্রামাণিক।
এসব অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- দেশবরেণ্য কবি ও শিক্ষক জুলফিকার মতিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএস’র অধ্যাপক ও ভাষাবিদ ড. স্বরোচিষ সরকার, রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. ফরিদা সুলতানা, কবি ও ছড়াকার হাসনাত আমজাদ, দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- চলচ্চিত্র নির্মাতা আহসান কবীর লিটন।
এসময় উপস্থিত বক্তারা উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হাসান আজিজুল হক এঁর জীবনের নানাদিক নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তারা বলেন, সৃজনশীল মানুষরা সবসময় একা থাকে, একা লড়াই করে। মানুষকে তারা মক্কা ভাবে। মানুষ ছাড়া তারা নয়’।
বক্তারা আরো বলেন, ‘১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বর্ধমানের যবগ্রামে জন্ম নেন তিনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশুনা নিজের গ্রামেই করেছেন হাসান আজিজুল হক। তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী রচনা লিখে দেশের সাহিত্যাঙ্গনে নিজের অবস্থান মজবুত করেছেন। গল্পগ্রন্থ সমুদ্রের স্বপ্ন, শীতের অরণ্য কিংবা উপন্যাস আগুনপাখি তাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। এর ফলে ১৯৯৯ সালে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন হাসান আজিজুল হক। ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। ২০১২ সালে তিনি ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি পান। এছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে আত্মজা ও একটি করবী গাছ, জীবন ঘষে আগুন, পাতালে হাসপাতালে, নামহীন গোত্রহীন, চলচ্চিত্রের খুটিনাটি, মা মেয়ের সংসার, বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প, সক্রেটিস, বৃত্তায়ন, শিউলি, আগুনপাখি, ফিরে যাই ফিরে আসি, উঁকি দিয়ে দিগন্ত প্রভৃতি।
সাংস্কৃতিক জোটের শ্রদ্ধা : এদিকে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের জন্মদিনে পালন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট। শুক্রবার দিবসটি উপলক্ষে কথাসাহিত্যিকের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অমিত কুমার দত্ত বলেন, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব। ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত এই মানুষটির দিকনির্দেশনা সাংস্কৃতিক অঙ্গন সহ জাতির জন্য চিরকালের পাথেয় হয়ে থাকবে। এ সময় জোটের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সহ জোটভুক্ত সংগঠনের সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ সালে হাসান আজিজুল হক জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তবে তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যক হিসেবে সমাদৃত। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণমানুষের জীবন-সংগ্রাম তাঁর সাহিত্যের উপজীব্য। ষাটের দশকে আবির্ভূত এ কথাসাহিত্যিক একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক সহ দেশ-বিদেশে নানা পদকে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর অন্যতম সাহিত্যকর্ম আগুনপাখি উপন্যাস। তিনি সার্বজৈবনিক সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ “সাহিত্যরত্ন” উপাধি লাভ করেন।