শুক্রবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: ‘বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শুভমন গিল, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া…বুঝতেই তো পারছেন?’ প্রশ্নটা শুনতেই মুখে একটা স্মিত হাসি দিলেন দুনিথ ভেল্লালাগে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে তার ব্যস্ততার সময় কেটেছে অনেক্ষণ। এরপর এসে এমন প্রশ্ন শুনে নিশ্চয়ই পেছনে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি।
ভেল্লালাগের চেহারায় এমনিতেই কম বয়সী ছাপ। টিভিতে বহুবার দেখেও বেশির ভাগেরই চিনতে অসুবিধা হয় তাই। বয়স, চেহারা কিংবা অন্য কিছু; তাতে কীইবা যায়-আসে। মাঠের ক্রিকেট যেটা, তাতে তো ঠিকই এর মধ্যে ছাপ রেখে ফেলেছেন এই লঙ্কান।
শ্রীলঙ্কার হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। শুরুতেই যে পাঁচ ব্যাটারের কথা বলা হয়েছে; এশিয়া কাপের মঞ্চে তাদের আউট করে ফেলে দিয়েছিলেন হইচই। অথচ কোহলি-রোহিতদের একজনকে আউট করাও স্বপ্ন থাকে অনেক বোলারের। দুনিথ তাদের সবাইকে ফিরিয়েছেন এক ম্যাচে। এরপর রাতের ঘুমটা কেমন হয়েছে? ফরচুন বরিশালে হয়ে বিপিএল খেলতে এসে সিলেটের আউটার মাঠে বসে ওই রাতেই ফিরে গিয়েছিলেন দুনিথ।
বলছিলেন, ‘ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে আমার কয়েকদিন লেগেছে। ওই দিনটা ছিল আমার জন্য খুবই আনন্দের। কারণ ম্যাচের আগে আমি অনেক পরিশ্রম করেছিলাম। আমি তাদের উইকেট নিতেও চাইছিলাম। পরে যখন সেটি সত্যি হলো, তা ছিল অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ’ দুনিথ ইংরেজি বলেন ভেঙে ভেঙে। হয়তো ক্যামেরা কিংবা রেকর্ডারের সামনে কথা বলায়ও আছে অনভ্যস্ততা। কথা বলার তীব্র ইচ্ছে অবশ্য লুকায় না তাতে। এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচে যাদের আউট করেছেন, তাদের কারো সঙ্গে কথা হয়েছে?
দুনিথ এরপর বলেন বেশ আনন্দ নিয়ে, ‘কোহলির সঙ্গে কথা হয়েছিল। উনি এসে আমার খেলায় কীভাবে উন্নতি করতে পারি সেসব নিয়ে বলেছেন। ’শ্রীলঙ্কার অনেক ক্রিকেটারের মতোই তার শুরুও হয়েছিল স্কুল ক্রিকেটে। এরপর বয়সভিত্তিক নানা পর্যায়ে খেলেছেন, অধিনায়কত্বও করেছেন। বাংলাদেশে বিপিএল খেলতে নয়, দুনিথের আসার কথা ছিল বেশ আগে। কিন্তু তখন আসেননি কেন? ‘আমার পরীক্ষা ছিল। বয়স কম ছিল। পড়াশোনাই তো তখন জরুরি!’
এখন অবশ্য ক্রিকেটই ধ্যানজ্ঞান দুনিথের। সেটির শুরুও হয়েছিল পরিবার থেকেই। বাবা সুরাঙ্গা ভেল্লালাগেও ক্রিকেট খেলতেন, ছিলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার। স্বপ্ন দেখতেন জাতীয় দলে খেলারও। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কিন্তু ওই আফসোস নিশ্চয়ই এখন আর নেই। দুনিথের কথা শুনেই মনে হয় তেমন, ‘বাবা আমাকে সমর্থন জুগিয়েছে পুরো পথেই। শুধু বাবা-ই না, আমার মা-ও। এমনিতে বাবা যেহেতু ক্রিকেট খেলেছেন। উনার অনেক অভিজ্ঞতা, খেলাটা ভালো বোঝেন। বাবার সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে অনেক কথা হয়। ’
দুনিথের সঙ্গে কথা বলতে বলতে চলে আসে তার প্রেমিকা ডিয়ান ডেস্টেনি ডি সিলভার প্রসঙ্গও। মার্কেটিংয়ের এই ছাত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক তার। তাকে নিয়ে কেবল বললেন এটুকুই, ‘ভালো বা খারাপ সময়; ও সবসময়ই আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছে। ’টি-টোয়েন্টির যুগে ব্যাটারদের কাছে হুটহাটই দিশেহারা হতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। টিকে থাকতে ভাণ্ডারে যোগ করতে হচ্ছে নতুন নতুন অস্ত্র। দুনিথ কী করেন? সবসময় শেখার আগ্রহ ও পরিশ্রমই ভরসা লঙ্কান তরুণের।
‘আমি বাঁহাতি স্পিনারদের অনেক ভিডিও দেখি। ওখান থেকে শেখার চেষ্টা করি। এখানে বা আমার দেশে, যেখানেই হোক; ভালো কোনো ক্রিকেটারকে পেলেই তার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করি। টি-টোয়েন্টি ও সাদা বলের ক্রিকেটও তো অনেক খেলছি। আমি সবসময় নিজের ওপর বিশ্বাস করি। যেটা নিজের করতে ইচ্ছে করে, তাতে আস্থা রাখি। ’
প্রিয় বাঁহাতি স্পিনার কারা, কাদের ভিডিও দেখেন? এই প্রশ্নের উত্তরে চলে এলেন এক বাংলাদেশিও। আপনি নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন কে তিনি? দুনিথের কণ্ঠেই কল্পনা করুণ বাকি নিশ্চয়তা, ‘প্রথমত আমার পছন্দ রবীন্দ্র জাদেজা। সাকিব আল হাসান, রঙ্গনা হেরাথ, ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকেও খুব ভালো লাগে। ’
তাহলে, যদি সাকিবের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়? ‘তাহলে তো খুব ভালো হয়!’ কোন গুণটা নেবেন? ‘সম্ভব হলে দুনিয়ার সব বাঁহাতি স্পিনারের সব গুণই নিয়ে নিতে চাই। ’ এমন কিছু শোনার পর তার সঙ্গে কথোপকথের শেষটা ছিল এমন, ‘তাহলে তো আপনি কিংবদন্তি হবেন। একটা ছবি তুলে রাখি। কখনো হয়তো আমাদের আবার দেখা হবে!