সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীর বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিক মালিক সমিতিতে তুঘলকি কাণ্ড!

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার নির্বাচন নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটে গেছে। বছরের পর বছর এই অ্যাসোসিয়েশনকে জিম্মি করে রাখা ক্লিনিক মালিকেরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন।
তাদের অযৌক্তিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিত করে দিতে বাধ্য হয়েছে। প্রায় ৩০ বছর পর এই সংগঠনটির নির্বাচন হতে যাচ্ছিল আগামী ২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনে নিশ্চিত ভরাডুবি জেনে একটি পক্ষ অপকৌশল অবলম্বন করার কারণে তা স্থগিত হয়ে গেছে।
জানা গেছে, প্রায় তিন দশক আগে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক, হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখা গঠন হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনদিন সংগঠনের সদস্যরা ভোট দিয়ে তাদের সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ পাননি। বিভিন্ন পক্ষকে ম্যানেজ করে হাতেগোনা কয়েকজন সংগঠনটি কব্জ করে রেখেছিলেন বছরের পর বছর। তিন বছর পর পর শুধু কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কখনও নির্বাচন হয়নি।
এই সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে ক্লিনিক মালিকদের দুর্বলতার সুযোগে তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে নানা সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। সংগঠনটিতে প্রায় ২৭ বছর ধরে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন ডা. এস এম এ মান্নান। আর ১৮ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক আছেন মোখলেসুর রহমান শাহ। দীর্ঘদিন পর এবার নির্বাচন হতে যাওয়ায় সাধারণ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের মনে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। কিন্তু কুচক্রি মহলের অপচেষ্টায় নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২২ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে। এর আগে গত ১০ থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের মাঝে মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। ১৯টি পদের বিপরীতে ৩৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। দাখিল করেন ৩১ জন।
এরমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুজন করে চারজন মনোনয়নপত্র জমা দেন। সভাপতি পদের প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও ইউনাইটেড এমআরআই সেন্টারের মালিক মোখলেসুর রহমান শাহ এবং আল-আরাফা ক্লিনিকের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান।
সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীরা হলেন- দ্য ইউনাইটেড ইমেজিং সেন্টারের মালিক এম এ জাহিদ ও মডেল হাসপাতালের মালিক ডা. জিএম কবীর। সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী ডা. জিএম কবীরকে নিয়েই শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। তাকে নির্বাচন থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডা. জিএম কবীর রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে (রাবি) মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। এটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। তবে তিনি সরকারী চাকরিজীবী হয়েও নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। অথচ ডা. কবীর এই সংগঠনের সদস্য। তার ভোটাধিকার রয়েছে। কারও ভোটাধিকার থাকলে তিনি প্রার্থীও হতে পারেন। তারপরেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। এখন করণীয় ঠিক করতে না পেরে আপাতত নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সাধারণ ক্লিনিক মালিকেরা বলছেন, সংগঠনে কারও সদস্যপদ থাকলে তিনি ভোটাধিকার রাখেন। ভোট দেওয়ার অধিকার থাকলে তিনি প্রার্থী হওয়ারও সুযোগ রাখেন। এখন নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে ডা, কবীরকে নির্বাচন থেকে দূরে সরানোর নোংরা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এই কাজ যারা করেছেন, সাধারণ সদস্যদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আরও নষ্ট হয়েছে।
তারা আরও বলছেন, দিনের পর দিন কয়েকজন ব্যক্তি সংগঠনকে জিম্মি করে রেখে নিজেরা উপকৃত হয়েছেন। সাধারণ সভায় এই সংগঠনের সদস্যদের চাপের মুখে তারা নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। এখন নির্বাচন বানচাল করে তারাই সংগঠনের নেতৃত্বে থাকার চেষ্টা করছেন। সরকারী চাকরিজীবীকে সংগঠনের সদস্য পদ দেওয়া হলে তার নির্বাচন করারও সুযোগ আছে। কেউ সরকারী চাকরি করেও সংগঠনের সদস্য হলে তার জবাব তিনি তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। কিন্তু সংগঠনকে তিনি জবাবদীহি করবেন কেন?’
এই নির্বাচনের সভাপতি প্রার্থী মোখলেসুর রহমান শাহ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ডা. কবীর সরকারী চাকরি করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অভিযোগ তুলেছেন। এখন নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই তো।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ^াস বলেন, ‘কারও সদস্যপদ থাকলে তিনি ভোট দেবেন, প্রার্থী হবেন এটাই স্বাভাবিক। কারও সদস্যপদ থাকলে তার প্রার্থীতার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করার কিছু আছে বলে মনে করি না। তারপরেও অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে একটা চিঠি দিয়েছি। তাদের কোন বিধিনিষেধ আছে কি না তা জানতে চেয়েছি। তবে এখনও কোন প্রতিউত্তর পাইনি। আমরা অপেক্ষা করছি। সে জন্যই নির্বাচন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। কীভাবে এটার সমাধান করা যায় আমরা সেটা দেখছি।’


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ | সময়: ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর