সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহী-২ আসন : কাঁচি প্রতীকে ভোট চায় নগর আ’লীগ

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে কাঁচি মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে রাজশাহী-২ আসনের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তারা বলছেন, নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে সারা দেশেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন করছেন। টানা তিন বারের সংসদ সদস্য এবারও চৌদ্দ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। কিন্তু ১৮ বছরে কোন উন্নয়ন না দেখে নৌকার মাঝি পরিবর্তন করতে চাই রাজশাহীর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টিকে নিয়ে আমরা ১৪ দল গঠন করেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে তারা সরকারকে চাপ সৃষ্টি করে নৌকা প্রতীক চায়। ওয়ার্কাস পার্টি আমাদের সরকারকে বলেছে যদি তাদেরকে নৌকা না দেয়া হয় তাহলে জাতীয় রাজনীতিতে সংকট তৈরি হবে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সংকট হবে। এভাবে তারা আওয়ামী লীগের ওপর চাপ সৃষ্টি করলেন। চাপ সৃষ্টি করার ফলে আওয়ামী লীগের নেত্রী কৌশল অবলম্বন করলেন। যার ফলে তাদেরকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাজশাহীর প্রেক্ষাপটে জনগণ বলছে যে আমরা ভোট দিতে যেতাম না যদি আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী না দাঁড়াতো। এখন তারা স্বাচ্ছন্দে ভোট দেয়ার আশ্বাস দেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী মহানগর আওয়াীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মাদ আলী কামাল বলেন “আমাদের নৌকা অপছন্দ নয়, কিন্তু ফজলে হোসেন বাদশা কে পছন্দ নয়। এ জন্য আমরা দলীয় ভাবে সকল নেতা কর্মী সফিকুর রহমান বাদশার কেচি প্রতীকে ভোট করছি। ফজলে হোসেন বাদশা ১৫ বছর যাবত নৌকা নিয়ে ক্ষমতায় কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগ কে কোনো প্রকার তোয়াক্কা করেন না। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে অথচ আমাকে একবার ও বলতে আসেনি, আমরা কি নিজে যেয়ে তার নির্বাচন করবো। ”
অধ্যক্ষ বাদশা বলেন, ওয়ার্কাস পার্টির এমপি বাদশা আওয়ামী লীগের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক না রেখেই তিনি নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। গণমানুষের সাথেও কিন্তু তিনি কোন ধরনের যোগাযোগ করছেন না। যার ফলে আমরা বাধ্য হয়েছি স্বতন্ত্রপ্রার্থী দাঁড়াতে। এটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক।
দল থেকে নৌকার মনোনয়ন দেয়ার পরেও কেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশের প্রায় সকল আসনেই আওয়ামী লীগের সতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছে সারা বাংলাদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চায়।
আর যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শের পক্ষে তারা সকলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোট করে জিতে আসুক। আমার সদর আসনে দারানোর মুল উদ্দেশ্য হলো ১৯৭৩ সালের পর থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের নিজস্ব কোনো প্রার্থী ছিলনা। এই লক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাই এইবার আমাকে স্বতন্ত্র পার্থী হিসেবে দেখতে চেয়েছে। দলীয় প্রার্থী থাকার প ও আমি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছি।
মহানগর থেকে আপনার উপর সমর্থন দেওয়ার পরও নেত্রী শেখ হাসিনা ওয়ার্কারস পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশাকে নৌকা প্রতীক দেওয়ার কারণ কি ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নেত্রী এইটা একটা টেকনিকাল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি সতন্ত্র থেকে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আমাকে নিষেধও করেননি। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির নির্দেশে সকল নেতা কর্মী তার সাথে আছেন।
তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগরে জনসাধারণ পরিবর্তন চায়। জনসাধারণ প্রতিদ্বন্দিতামূলক নির্বাচন চায়। জনগন ভোট দেয়ার জায়গা খুজতেছে। এই আসন থেকে সর্বস্তরের জনগণ আমাকে পরবর্তীতে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চায়। আমি যদি না দাঁড়াতাম তাহলে মহানগর অন্য কাউকে সমর্থন করত। এখন সকল নেতা থেকে শুরু করে কর্মীরা কাঁচি মার্কায় ভোট করছেন। গতকালের বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সবাই কাঁচি প্রতীকের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। যতদিন গড়াচ্ছে রাজশাহী সদর আসনে নির্বাচনী মাঠ তত গরম হয়ে উঠছে।
তবে ফজলে হোসেন বাদশা দাবি করছেন, আওয়ামী লীগ তার সঙ্গে আছে এবং সাধারণ ভোটাররা এবারও বিপুল ভোটে তাকে বিজয়ী করবে। তিনি বলেন, রাজশাহীর টেকসই ও কাঙ্খিত উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা প্রতীকের বিজয়ের কোন বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার মনোনিত প্রার্থীকে আবারও বিজয়ী করতে রাজশাহীর মানুষ পূর্ণাঙ্গরূপে ঐক্যবদ্ধ। ছাত্র জীবন থেকেই আমি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছি। রাজশাহীর মানুষ সবসময় আমাকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করেছে। ২০০৮ সালে এই শহরের মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে যে গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছিল; তা আমি সততার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করেছি। এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে এর আগে সংসদে গিয়ে আমার থেকে বেশি কেউ কথা বলেনি। আমি আমার দলের বা নিজের কথা যতটা না বলেছি; তার চেয়ে বেশি বলেছি রাজশাহীর মানুষের কথা। তারই ফলশ্রুতিতে আজকের রাজশাহী। জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীবাসীর সঙ্গে আছেন। আমরাও আছি।
তিনি বলেন, আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরে কাগজে কলমের শিক্ষানগরীকে প্রকৃত শিক্ষানগরীতে পরিণত করেছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার এ বিষয়ে আমাকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছে। রাজশাহীর সঙ্গে ঢাকার বিমান যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল। আমি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারের সহযোগিতায় এটি চালু করেছি। এখন আমরা অনেকেই স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে খুব অল্প সময়েই বিমানে করে ঢাকায় পৌঁছে যেতে পারি। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্প ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। সেটিকেও রক্ষা করে ফের রাজশাহীর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। সরকারের সুদৃষ্টি থাকলে আগামীতে রেশম শিল্প হয়তো আলাদাভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। রাজশাহীর সঙ্গে রেলপথের উন্নয়ন হয়েছে। সড়কপথের উন্নয়ন হয়েছে। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আগামীতে আপনারা আবারও জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকের ওপর আস্থা রাখলে রাজশাহী শহর আরও সমৃদ্ধ শহরে পরিণত হবে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩ | সময়: ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ