সোমবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা :
শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, পরিবার জয় করার পর যিনি জয় করে নিয়েছেন সমাজ , তিনিই জয়িতা। ‘একজন সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা’। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক জয়িতা। এ বছর বেগম রোকেয়া দিবসে রাজশাহীর বাঘায় “সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য’’ জয়িতা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাক ও সান সানশাইন পত্রিকার সাংবাদিক নুরুজ্জামানের সহধর্মিনী নিলা জামান।বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর তাকে এই স্বীকৃতি দেন। গত ৯ ডিসেম্বর বাঘা উপজেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এক অনাঢ়ম্বর অনুষ্ঠানে সম্মানীত অতিথি বৃন্দদের হাত থেকে তিনি এ পুরুস্কার গ্রহন করেন।
আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত রীতি আছে ‘যে রাঁধে-সে চুলও বাঁধে। কিন্তু এই কথাটি এখন আর তেমন শোনা যায়না , কারণ নারীরা এখন আর শুধু রান্না-বান্না আর সংসার ধর্ম পালনের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি। আটপৌড়ে জীবনের গন্ডি ডিঙ্গিয়ে নিজেদের দক্ষতা, যোগ্যতা এবং অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে তারা পৌঁছে গেছেন সর্বোচ্চ শেখরে। আর এসব কিছুর পেছনে অবদানে রয়েছেন বিশ্ব খ্যাতি সম্পন্য ও জননন্দিত নেত্রী বাংলাদেশের অহংকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ।
নিলা জামান একজন জয়িতার নাম। তাঁর বাড়ি বাঘা উপজেলার আমোদপুর গ্রামে। তিনি একাধারে একজন নারী নেত্রী। যিনি নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয়ের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে গুটি গটি পায়ে সমাজের প্রায় সকল ক্ষেত্রে নিজের জন্য অনন্য সব জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন। সমাজের সকল ক্ষেত্রে তার অনবদ্য বিচরণ মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। ইতোমধ্যে তিনি সমাজের অবহেলিত নারীদের সাবলম্বী করার লক্ষে একটি সমিতি গঠন করেছেন। আর সেই সমিতির নাম দিয়েছেন “ আমোদপুর স্বেচ্ছাসেবী নারী উন্নয়ন সংস্থা’’ ।
কোথাও আগুন লেগে ঘরপোড়া মানুষ যখন নিজেদের অসহায় ভাবতে শুরু করেন, তখনই সেখানে ছুটে যান সবার প্রিয় নিলা আপা। অসহায় মানুষকে যতটুকু পারেন সহায়তা করেন, তাকে মানসিকভাবে উজ্জীবীত করে আবার দাঁড়াবার প্রেরণা যোগান। শুধু আগুনে পোড়া নয়, শীতার্ত মানুষ প্রতি বছর যার হাত থেকে উষ্ণ বস্ত্রের যোগান পায় । এখানেই শেষ নয়, সামাজিক সংগঠন, নারীদের ব্যবসায়িক এবং আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার উদ্যোগ, কৃষি ভিত্তিক ট্রেনিং, গবাদিপশু ও হাস-মুরগী লালন-পালন, কিংবা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা সামগ্রী দিয়েও সহায়তা করেন তিনি। অপর দিকে বাল্যবিয়ে রোধ, যৌতুক প্রথা নির্মূল, বিবাহ বিচ্ছেদ বন্ধ, নারী সমাজের নানান সমস্যা, সমাজে চরমভাবে অবহেলিত ও নিপীড়নের শিকার এবং পিছিয়ে থাকা নারীদের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্নজনকে উদ্বুদ্ধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন,আমরা বিশ্বাস করি এই জয়িতাদের অনুপ্রেরণা মূলক সাফল্যগাথা আরও অনেক নারীকেই অনুপ্রাণিত করবে। হাজারো নারীর মনে হাঁটি হাঁটি পা পা করে উঁকি দেওয়া স্বপ্নগুলো পাখা মেলবে আকাশে । তৈরি হবে লাখো জয়িতা। লাখো জয়িতার মিছিলে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ উজ্জ্বল ভবিষ্যত । এই সফল নারীদের অপরাজেয় রূপ দেখে সমগ্র সমাজ-নারী বান্ধব হবে এবং এতে করে সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণও ত্বরান্বিত হবে।
প্রসঙ্গত, সরকারের মহিলা অধিদপ্তর ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় ২০১৪ সাল থেকে সারাদেশে জয়িতাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয়। উদ্যোগটির নাম ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’। “ সবার মাঝে ঐক্য গড়ি, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করি” প্রতিপাদ্যে বিষয় নিয়ে গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৩ সারাদেশে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হয়েছে। ঐদিন অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জন, চাকুরি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান,সফল জননী, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদোমে জীবন শুরু এবং সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদার রাখা-সহ মোট পাঁচটি বিষয়ের উপরে জয়িতাদের মুল্যায়ন করা হয়।
সানশাইন/সোহরাব