বোনকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করলো ভাই !

নাটোর প্রতিনিধি : 
গোপনে মামলা করে একতরফা রায় নিয়ে নিজের বোনকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে নাটোর আইনজীবী সমিতির একজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে। তবে আইনজীবি শামসুল হক ভূইয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে নাটোর সদর উপজেলার লক্ষিপুর খোলাবাড়িয়া গ্রামে সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবীর সহদর বোন নুর মেহের ছাড়াও তার অন্যান্য স্বজনেরা সেখানে উপস্থিত থেকে অভিযোগ করেন।

 

 

সংবাদ সম্মেলনে নুর মেহের অভিযোগ করেন, তিনি ওয়ারিস সূত্রে মায়ের কাছ থেকে ৮২ বর্গলিং জমি পান। ওই জমিতে তিনি বাড়িঘর করে গত ৩০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। হঠাৎ করে সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকালে তাঁর মেজ ভাই ও নাটোর আইনজীবী সমিতির আইনজীবী শামসুল হক ভুঁইয়া আদালতের লোকজন নিয়ে তাঁর বাড়িতে যান। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আইনজীবীর সাথে থাকা লোকজন তাঁর বাড়িঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেন এবং তাকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করেন। এ সময় তিনি উচ্ছেদের কারণ জানতে চাইলে শামসুল হক বলেন, এই জমি নিয়ে তিনি নাটোর সদর সহকারি জজ আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা (১২৩/২০১১ অঃপ্রঃ ও জারী ২/২৩) করেছিলেন। মামলায় তিনি রায় পেয়ে আদালতের মাধ্যমে দখল নিতে এসেছেন।

 

নুর মেহের বলেন,আমি ভাইয়ের হাত-পা ধরে বাড়ি ভাঙতে নিষেধ করি। কিন্তু তিনি শোনেন না। তখন তিনি অন্তত বাড়ি ভাঙার জন্য অন্তত একদিন সময় চান। কিন্তু তিনি তাতেও রাজি হন না। অবশেষে তিনি আদালতের লোকজনকে উচ্ছেদের কাগজপত্র দেখাতে বললে তাঁরা কাগজপত্রও দেখান না। তাঁরা আদালতে গিয়ে কাগজপত্র তুলতে বলেন।

 

অবশেষে শতাধিক মানুষের সামনে তাঁর ভাই সামশুল হক ভুঁইয়ার উপস্থিতিতে পুরো বাড়ি ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। নুর মেহের বলেন,আমরা এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছি। শোবার ঘরে অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে নগদ কিছু টাকা ও গহনাপত্র ছিল। কোনো কিছুই বের করতে পারিনি। সব তছনছ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন,আজ ছুটির দিন হওয়ায় আমরা আদালতে যেতে পারিনি। আমার ভাইয়ের লোকজন এসে আমার ভিটাতে একটা টিনের চালা তুলে রেখে গেছেন।

 

এ ব্যাপারে নুর মেহেরের বড় ভাইয়ের ছেলে আমির হোসেন বলেন,আমার চাচা আইনজীবী সামশুল হক ভুঁইয়া তাঁর মায়ের জমিতে মাত্র ১৬৪ বর্গলিং জমি পাবেন। তিনি যদি একতরফা রায় পান তাহলেও সোয়া আট শতাংশ জমির মধ্যে বাঁকি জমি আমরা ভাগিদার। কিন্তু চাচা পুরো জমি কিভাবে বাঁশগাড়ি করে দখল করলেন তা বুঝতে পারছি না। তিনি আমাদের বিরুদ্ধে আরও তিনটা মামলা করেছেন। তিনি দুঃখ করে বলেন,আমার আব্বা সুলতান হক ভুঁইয়া আমার ওই চাচাকে লেখাপড়া শিখিয়ে আইনজীবী বানিয়েছেন। অথচ আজ তাঁর কারণে আমরা বাড়িঘর ছাড়া হচ্ছি।

 

অভিযুক্ত আইনজীবী সামশুল হক ভুঁইয়া জানান, তিনি ২০১১ সালে তাঁর ওয়ারিসদের বিরুদ্ধে বাটোয়ারা মামলা করেছিলেন। ওই মামলার বিষয়ে অবগত হওয়ার পরও তাঁর বোন নুর মেহের ও ভাইয়ের ছেলেরা মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। তাই একতরফা রায় হয়েছে। আদালত জারী মামলা মুলে আমাকে জমির ভোগদখল বুঝিয়ে দিয়েছেন। এতে কোনো অন্যায় হয়নি। মামলার বিষয় গোপন রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন,এটা সত্য না। আদালতের নোটিশে তাঁদের স্বাক্ষর আছে। পুরো জমি তিনি কিভাবে পেলেন জানতে চাইলে বলেন, বাবা মায়ের সম্পত্তি এজমালিতে ছিল। তাই বাড়ির জমি আমি পুরো নিয়েছি। বোনকে মাঠে জমি দিয়েছি।

সানশাইন / শামি

 


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৩ | সময়: ৭:১০ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine