সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহীতে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু:খ !

শাহ্জাদা মিলন :

রাজশাহীতে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় কয়েকদিন আগে নির্বাচিত হয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের অর্ন্তগত ২৮ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত কাজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান, স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নিয়মাবর্তিতা, ডিজিটাল ক্লাস রুম, মানসম্মত ফলাফল, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার কমানো, আধুনিক সুবিধাসহ নানা বিষয়ে স্কুলটিকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় রাজশাহী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস “জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৩” প্রদানে জেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত করা হয়েছে।

 

 

তবে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু:খ রয়ে গেছে ১৮ বছর ধরে। ছোট্ট একটি বিষয় তবে কেউ গুরুত্ব সহকারে নেন নি। এই বিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে রয়েছে সরু গলি। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দুইয়ের অধিক এক সাথে বের হতে পারে না। এছাড়া কোন রিকশা কিংবা অন্য কোন যানবহন এমনকি সাইকেল নিয়ে ঢুকলেও বাঁধা হয়ে দাড়িয়ে থাকে বৈদ্যুতিক পোল। যার কারনে গত দেড়যুগ ধরে কষ্ট ভোগ করছেন এখানে শিখতে আসা শিক্ষার্থী,পাঠদান করতে আসা শিক্ষক ও সন্তানকে এগিয়ে দেয়া ও নিয়ে যাওয়ার জন্য আসা অভিভাবকরা।

বিদ্যালয়ের সরু রাস্তা হওয়ায় গাড়ি ঢুকতে পারেনা, মাঝখানে পোল বসানো –  সানশাইন

 

চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শান্ত, বলেন, গেটের সামনে এই একটা খাম্বা থাকার কারনে স্কুল ছুটি হলে দৌড় মেরে স্কুল থেকে বের হতে গেলেই পোলে ধাক্কা খায়। কেউ অসুস্থ হলে গলির ঐ মাথায় রিকশা দাড় করিয়ে আবার এসে পায়ে হেটে তাকে নিয়ে যেতে হয়।

 

 

একই ক্লাসের সাইফ,হাবিবা,বর্ষা জানান, এই খাম্বার কারনে আমাদের যেতে আসতে খুব কষ্ট হয়। সাইকেল নিয়ে ঢোকা যায়না। ছুটির পর সবাই এক সাথে বাহির হওয়া যায়না। এ খাম্বা সরানো ও গলিটার প্রাচীর দুই হাত সরানো গেলে খুব ভালো হয়।

 

 

রাজশাহী জেলায় শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কোহিনুর বেগম, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের স্মার্ট শিক্ষার্থী চাই। এই লক্ষ্যে আমার কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় প্রাথমিক শিক্ষা দিনদিন এগিয়ে যাচ্ছে। তার একটি নতুন সংযোজন হলো স্মার্ট বাংলাদেশ। যার ছোঁয়া লেগেছে প্রতিটি বিদ্যালয়ে। যা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন এ শিক্ষিকা।

 

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, স্কুলটিকে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হওয়ার কৃতিত্ব শুধু মাত্র আমার একার নয়। এজন্য তিনি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার মো: মাসুদ রানাসহ বিদ্যালয়টির অন্যান্য সহকারী শিক্ষকদের। যাদের অনুপ্রেরণা ও সার্বিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিতে আমাকে সাহায্য করেছে।

 

 

তিনি আরো জানান, প্রতিষ্ঠানটি তে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে খেলাধুলার মাঠ, রয়েছে ফুলের বাগান। দেয়ালঘেরা বিদ্যালয়টির চত্বর পরিষ্কার পরি”ছন্ন। দেয়ালে আঁকা বিভিন্ন ফুল, ফল ও প্রাণীর ছবি, রয়েছে মনীষীদের বাণী, নানান ছড়া।সজ্জিত ক্লাস রুম,বঙ্গবন্ধু কর্নার,মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম,লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ সকলের সাহায্যে স্কুলটিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন শিক্ষকরা। তবে স্কুলের কষ্ট শিক্ষার্থীদের মতো আমরাও প্রতিদিন সম্মুখিন হই। রিকশা নিয়ে ঢোকা যায় না। গলিটাও ইটের দিয়ে তৈরি হওয়ায় রোদ না পড়ায় বর্ষা কালে পা পিছলে যায় অনেকের। বড় ধরণের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় প্রায় ২০ মিটার গলি। আর গেটের সামনে বৈদ্যুতিক পোল সরানো খুব জরুরী। আমরা শিক্ষা কার্যক্রমে ভালো করছি। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় অনেক অভিভাবক অন্য স্কুলে ভর্তি করে দেন এমন অভিযোগ আমরা শুনেছি।

 

 

তিনি আরো বলেন, ছোট ছোট বাচ্চারাতো ছোটাছুটি করতে গিয়ে গেটের বাইরে বের হলেই পোলে ধাক্কা লেগে পড়ে আহত হয়। এটা আমাদের এই স্কুলের জন্য খুবই বিড়ম্বনা তৈরি করে রেখেছে। যত দ্রুত সম্ভব পোলটি দ্রুত সরিয়ে সুবিধাজনক স্থানে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

 

 

তিনি আরো বলেন, সরকারী স্কুলের প্রতি অনেক অভিভাবক ইতিবাচক ধারণা রাখেন না। যার কারনে এতো বছর হয়ে গেলেও কতৃপক্ষ কেউ গুরত্ব সহকারে নেন নি। আমরা বিনীত ভাবে রাসিক মেয়র স্যার সহ নেসকো কতৃপক্ষসহ যারা রয়েছেন তাদের নিকট আবেদন জানাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব এই দুটি সমস্যা সমাধান করে দিলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহায় পাবে ও সকলের যাতায়াতের সমস্যা সমাধান হবে। এতে শিক্ষার পরিবেশ আরো একটু ভালো হবে বলে আমরা মনে করছি।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৩ | সময়: ৬:০১ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine