বুধবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
চারঘাট প্রতিনিধি :
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় ৯টি ডিজিটাল ডাকঘরের নিজস্ব নেই কোনো ভবন। শুধুমাত্র নামেই ডিজিটাল,এইসব ডাকঘরের কার্যক্রম চলছে দোকান, স্কুলের পরিত্যক্ত কক্ষ ও বাড়িতে। ফলে স্থানীয় লোকজন ডাকসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চারঘাট উপজেলার প্রধান ডাকঘর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ছয়টি ইউনিয়নে বারোটি ডাকঘর আছে। এর মধ্যে প্রধান ডাকঘর একটি, ইউনিয়ন ডাকঘর এগারোটি। প্রধান ডাকঘরের নিজস্ব ভবন আছে,নিমপাড়া ইউনিয়নের নন্দনগাছি ও নিমপাড়া দুটি ডাকঘরের ভবন থাকলেও নেই তার সদ্ব্যবহার, ইউনিয়নের নয়টি ডাকঘরের কাজ চালানো হচ্ছে দোকান, পরিত্যক্ত কক্ষ ও বাড়িতে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়,হাটঝিকরা ডিজিটাল ডাকঘরের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে ঝিকরা বাজারের একটি দোকানে। ওই ডাকঘরের ডাক পিয়ন খোয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কার্যালয় নেই। নেই চেয়ার-টেবিল।ঝিকরা বাজারে অন্যের দোকানে রাজস্ব, ডাকটিকিট, খাম বিক্রি করছি। তিনি আরো বলেন, ‘আমার কাজ গ্রামে ঘুরে মানুষের হাতে চিঠি পৌঁছে দেওয়া। নিজস্ব কার্যালয় না থাকায় ফেরত চিঠিগুলো সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়ে এসব নিজের বাড়িতে রাখতে হচ্ছে।’
হলিদাগাছি ডাকঘরের পোস্টমাস্টার ইমরান হোসেন বলেন,হলিদাগাছি স্কুলের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে ডাক বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। চৌমুহনী পোস্টমাস্টার মোহাম্মদ শেরশাহ বলেন, ‘নিজেদের ভবন নেই, আসবাব নেই, চেয়ার-টেবিল, বিদ্যুৎ নাই, তাই নিজ বাড়িতে ডাক সেবা দিয়ে থাকি। ইউসুফপুর ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মোঃ ফজলুল হোসেন বলেন আমাদের এখানে একটি ক্লাবের পরিত্যক্ত ঘর নিয়ে ডাক সেবা দিয়ে থাকি।
এদিকে সরদহ সরকারি ডাকঘর পরিচালনা করেন,পুলিশ একাডেমির একটি পরিত্যক্ত ঘরে,যার জানালা দুখানও ভাঙা। টিনের ছিদ্র দিয়া পানি পড়ে। ফাঁক দিয়া ইঁদুর, সাপ ঢোকে,গোটা ঘরে উইপোকার আতুর ঘর হয়ে গেছে। ভয় ভয় লাগে থাকতে মন চায় না। প্রতি মাসে এগুলা সমস্যার কথা স্যারের কাছে বলেও, কাজ হয় না। ঘর দেয় না চেয়ার-টেবিলও দেয় না।
পরানপুর পোস্টমাস্টার নেকসার হোসেন বলেন, আমাদের ডাকঘরের কোন ভবন নেই, পরানপুর বাজারে অন্য ব্যক্তির একটিপরিত্যক্ত ঘরে ডাক সেবা দিচ্ছি, তবে ওই ঘর মালিক আমাদের আর রাখতে চাচ্ছে না,এনিয়ে আমরা খুব হতাশ, বিদ্যুৎহীন ও নিরাপত্তাহীন অফিস চুরি যাওয়ার ভয়ে প্রতিদিন উপকরণগুলো নিয়ে আসি আবার কাজ শেষে বাড়ি নিয়ে যাই।’ মুক্তার পুর পোস্ট অফিসের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পোস্ট অফিসের কার্যক্রম চলে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের একটি কক্ষে ডাকরা ও বাকড়া পোস্ট অফিস খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছিল না। বাজারের মুদি দোকানীর সাথে কথা বলে জানা যায় পোস্ট অফিসে কার্যক্রম চলে পোস্টমাস্টারের বাড়িতে পরে কথা হয় পোস্টমাস্টার আরিফুল ইসলাম ও নিজামুদ্দিনের সঙ্গে।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘পোস্ট অফিসের নিজের ঘর তুলবার কথা বললে স্যারেরা জমি চায়। কেও জমি দেয় না, আর ঘরও হয় না। এ জন্য বাড়িতে কাজ করতে হয়।’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, পোস্ট অফিসের নামে বরাদ্দকৃত কম্পিউটার ও প্রিন্টারসহ ডিজিটাল সামগ্রী পোস্ট অফিসে না রেখে সেগুলো রাখা হয়েছে পোস্ট মাস্টারের বাড়িতে। ডাকঘর কখন খোলা থাকে তা কেউ জানে না। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় সেবা গ্রহীতাদের।
উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা বুদিরহাট কলেজের প্রভাষক খোরশেদ আলম বলেন, শুনেছি বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেকটা ডাকঘর ডিজিটাল করেছেন।কিন্তু আমরা জন্মের পর থেকেই দেখছি ভাঙা ঘরে ডাকঘরের কার্যক্রম চলছে। সবকিছুর উন্নয়ন হলেও ডাকঘরের উন্নতি হয়নি। অনেকেই সেখানে সেবা নিতে গিয়ে অনীহা প্রকাশ করেন। এছাড়া ডাকঘরটি ভাঙা হওয়ায় আর্থিক লেনদেন করতে ভয় পান অনেকেই। এতে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
চাকরিপ্রত্যাশী স্থানীয় শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি অনলাইনের মাধ্যমে চাকরির আবেদন করি। তাই ডাকঘরে তেমন যেতে হয় না। তবে কিছুদিন আগে একটি কাজে ডাকঘরে গিয়েছিলাম। অফিসের অবস্থা দেখে আমি অবাক হয়েছি। অবহেলিতভাবে চলছে সরকারি অফিসটি।
সরদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধু বলেন, বর্তমান সরকার প্রত্যেকটা ডাকঘরকে ডিজিটালের আওতাভুক্ত করেছে।যাতে করে অতি দ্রুত দেশের জনগণ ডাক সেবা পাই । ডাকঘরের সেবার আওতা বেড়েছে। দেশ-বিদেশে চিঠি, পার্সেল পাঠানো ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানি ট্রান্সফার সেবাও দিচ্ছে। ডাকঘরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও কম্পিউটারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি থাকে। ডাকঘরের নিজস্ব ভবন হলে এগুলোর নিরাপত্তাসহ গ্রাহকরা উপকৃত হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা ডাকঘরের পরিদর্শক রিফাত আরা বলেন, নিজস্ব জমি না থাকায় ডাকঘরগুলোর ভবন হচ্ছে না। কেউ ডাকঘরের নামে তিন শতক জমি দান করলে সেখানে ভবন নির্মাণ করা হবে। আর নতুন ভবন ছাড়া আসবাব সরবরাহ করাও সম্ভব।
সানশাইন/সোহরাব