সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে গণতান্ত্রিক চর্চা ও আইনের শাসন অব্যাহত রাখবে। তিনি আরও বলেছেন, মানবাধিকার রক্ষার নামে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর রাজনৈতিক চাপ কাম্য নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ নিয়ে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ১৯বার ভাষণ দিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আগের বছরগুলোর মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেন। জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রথমবার বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, এ বছর সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৭৫তম বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ‘এই মাহেন্দ্রক্ষণে অবশ্যই মানবতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে হবে এবং সবার জন্য সমতা, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা নিশ্চিতে সামগ্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। আবার এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে মানবাধিকার রক্ষার নামে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর যেন চাপ সৃষ্টি করা না হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের এই অধিবেশনে আমি পরিষ্কারভাবে পুনর্ব্যক্ত করতে চাই যে বাংলাদেশ নিজের সংবিধান অনুসারে গণতান্ত্রিক চর্চা, আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অব্যাহত রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিশ্বনেতাদের প্রতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিতে একজোট হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি তাঁর ভাষণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা, রোহিঙ্গা সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, মানবাধিকার এবং ২০০৯ সালের পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রসঙ্গ আলোচনা করেন।
সুষ্ঠু ভোটের তাগিদ দিল যুক্তরাষ্ট্র : বাসস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া বলেছেন, তাঁরা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অহিংস নির্বাচন চান। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় আজরা জেয়া এসব কথা বলেন।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ব্রিফিংয়ে বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া রোহিঙ্গা সংকট, বিভিন্ন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন।
আজরা জেয়া বলেন, তাঁরা বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অহিংস নির্বাচন চান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁরাও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এই অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। আজরা জেয়া বলেন, তাঁরা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরও বহুগুণ বাড়াতে বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে আসিয়ান সদস্যদেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘তারা কি আমাদের ভুলে গেছে?’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
বিদেশি হস্তক্ষেপ জনগণ মেনে নেবে না: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে এমনকি বিদেশ থেকেও যদি কোনও প্রচেষ্টা নেওয়া হয়, দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
তিনি বলেন, দেশবাসী ভোট দিলে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু বিদেশ থেকে নির্বাচন বানচালের কোনও পদক্ষেপ নিলে জনগণ তা মেনে নেবে না। শুক্রবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর নিউইয়র্ক সফর সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দল সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। যদি কোনও কারণে নির্বাচন বানচালের কোনও পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যারা উদ্যোগ নেবে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আশা করেন, বিরোধী দলসহ নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টাকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এটা ভালো হবে কারণ, বিএনপি জোট ২০১৩-১৪ সালের মতো নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে কোনও অগ্নিসংযোগ করতে পারবে না। সরকারপ্রধান আশা প্রকাশ করেন যে দেশ ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তারা উভয় পক্ষ থেকে বা নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, শুধু আওয়ামী লীগকে টার্গেট করলে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ কারও শক্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আসেনি। আমি জনগণের শক্তি ও তাদের ভোটে ক্ষমতায় এসেছি। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।
কে নিষেধাজ্ঞা দেবে বা দেবে না, তা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন, তাদের দেশের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, খালেদা জিয়া বারবার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। তা সত্ত্বেও সরকারপ্রধান হিসেবে তার ওপর অর্পিত ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড স্থগিত করে বাড়িতে থাকার এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, তার সরকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) আওতা থেকে বের করে এনে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রথম আইন প্রণয়ণের পাশাপাশি তাদের সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে কারচুপির জন্য ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার যুক্ত করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ অসংখ্য নির্বাচন করেছে, যেখানে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। তাই নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনও উপায়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে চাইলে তাদের সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। যারা বিশৃঙ্খলা বা দেশের সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে চায়, তাদের ব্যাপারে তিনি দেশবাসীকে সতর্ক করেন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কোনো সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
দুর্নীতির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাপক দুর্নীতি থাকলে বাংলাদেশ বিশাল উন্নয়নের রোল মডেল হতে পারতো না। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার শুধু মেগা প্রকল্পই তৈরি করেনি, উন্নয়নকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনও অপপ্রচারে কান দেবেন না। কিছু লোক আছে, যারা দেশের কল্যাণ চায় না। প্রবাসীরা সচেতন থাকলে এই স্বার্থান্বেষী মহল সফল হতে পারবে না। অপপ্রচারকে অস্বীকার করে যথাযথ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।