শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: খুচরা পর্যায় থেকে পাইকারি কোথাও সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দামে আলু বা পেঁয়াজ বিক্রি করছে না কেউ। উল্টো গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ যেখানে বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা কেজিতে, সেখানে শুক্রবার মানভেদে একই পেঁয়াজ কিছু কিছু দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজিতে। আর আলু বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই প্রতি কেজি ৫০ টাকায়।
বাজারে আলু-পেঁয়াজ নির্ধারিত দামে বিক্রি না হলেও কোথাও কোথাও ডিম বিক্রি হচ্ছে বেঁধে দেওয়া দামে। তবে খুচরা টাকা না থাকার দোহাই দিয়ে সব দোকানেই প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ টাকা বেশিতে, অর্থাৎ ১৪৫ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লার চিত্র ভিন্ন। সেখানে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।
শুক্রবার মিরপুর ১ ও ২ নম্বরের কাঁচা বাজার ও পাড়া মহল্লার দোকান সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। পাড়ার মুদি দোকানে আলু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে ৫০ টাকা, বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মানভেদে ৪৫- ৫০ টাকা এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ৩৮-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে এলাকার মুদি দোকানে দেশি পেঁয়াজ ৯০- ৯৫ টাকা, ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছে ৯০-৯৫ টাকা, বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে মানভেদে ৮০-৯০ টাকা এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আর ভারতীয় পেঁয়াজ মুদি দোকানে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা, ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের কাছে ৭০ টাকা, বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রস জাতের পেঁয়াজ ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৯০ টাকায় এবং বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ৭৫-৮০ টাকায়।
আর এলাকার মুদি দোকানগুলোতে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। বাজারে ৮ থেকে ১০টি দোকান ঘুরে দেখা যায়, সব দোকানেই ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। ডিম ১৪৪ টাকা ডজন বিক্রির কথা থাকলেও ১৪৫ টাকায় বিক্রি কেন হচ্ছে জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানায় ভাংতি টাকার সমস্যা থাকায় ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। এসময় তারা ডিমের দাম আরও কমিয়ে আনার কথাও বলেন।
মিরপুর এক নম্বরের কাঁচা বাজারে হেলাল ডিমের আড়তের বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, ডিমের দাম ১৪০ টাকা বা ১৩০ টাকা করে দিক সরকার। আমাদের কোনও সমস্যা নেই, ক্রেতারা উপকৃত হবে। মিরপুর ২ নম্বরের এলাকার মোল্লা জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. জনি বলেন, আমরা বেশি দামে কিনে আনি বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কম দামে পেলে আমার কম দামে বিক্রি করতে কোনও সমস্যা নাই। আমি আলু কিনে এনেছি ৪২ টাকা, আর ভারতীয় পেঁয়াজ এনেছি ৫৮ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি করছি ৫০ টাকা আর পেঁয়াজ ৬৫ টাকায়। এরমধ্যে আবার আমার আনার খরচ আছে।
আলু- পেঁয়াজের ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা বিল্লাল বলেন, আমরা মানুষের বাসার সামনে গিয়ে দিয়ে আসি। তাই দাম ২/৪ টাকা বেশি রাখি। কিন্তু আমাদের কেনাও বেশি থাকে এটা সত্য। মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচা বাজারের খুচরা বিক্রেতা বাচ্চু মিয়া বলেন, সরকার তো দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা তো কম দামে পাই না। তাহলে কম দামে বিক্রি কররো কীভাবে?
তিনি বলেন, আমার আলু কেনা পড়েছে ৩৮ টাকা, এরমধ্যে বাছাই করে আলাদা করে বিক্রি করতেছি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। আর দেশি পেঁয়াজ কিনেছি ৭৫ টাকায়। নষ্ট আর বড়-ছোট আলাদা করে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি করছি। বাজারে আলু-পেঁয়াজ কিনতে আসা কামরুল আহসান ভুইয়া বলেন, সরকার তো দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু কিনতে তো হচ্ছে আগের দামেই। কোনও লাভ তো হলো না। ব্যবসায়ীরা দাম নির্ধারণকে পাত্তাই দিচ্ছে না।
ডিম কিনেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডিমের দাম বাড়ার পর থেকে ডিম কেনা বন্ধ করে দিয়েছি। আরেক ক্রেতা লিপন আলী বলেন, সিন্ডিকেটের কাছে বন্দি হয়ে আছে দেশের বাজার। খুচরা বিক্রেতাদের বলে কোনও লাভ নেই। ধরতে হবে মূল জায়গায়, যেখান থেকে বাজারে আসে এই পণ্যগুলো। এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন তারাও বেশি দামে কিনে আনেন বলে কম দামে বিক্রি করতে পারেন না।
পাইকারি ব্যবসায়ী হাবিব এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি আলু কিনেছি মুন্সীগঞ্জ থেকে। ৩৭ টাকা কেজিতে কিনেছি, বিক্রি করছি ৩৮ টাকায়। সরকারের নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে দাম হওয়ার কথা ৩৫-৩৬ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়েই সেটা বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। এটা কেন হচ্ছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা কমে আনতে পারি না, তাই দিতেও পারি না।
মেসার্স আল ঈমরান বাণিজ্য ভান্ডার নামের আরেক পাইকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতা মো. আজাদ জানান, তিনি রাজশাহীর আলু ৪০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৭৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৪ টাকা এবং ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৬৮ টাকায় বিক্রি করছেন। নির্ধারিত দামের কথা বললে তিনিও একই সুরে কথা বলেন, কম দামে পাই না, তাই কম দামে বিক্রিও করতে পারি না।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের দাম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি তিন কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত জানান। সে অনুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। আলু কেজিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫/৩৬ টাকা ও কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬/২৭ টাকা। ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি পিস ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপরও দাম নিয়ন্ত্রণে না আসায় ডিম আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বোতল ও প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল ১৬৯ টাকা লিটার, খোলা তেল ১৪৯ টাকা, পাম ওয়েল ১২৪ টাকা, চিনি খোলা ১২০ ও প্যাকেট ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে ডিমের বাজার স্থিতিশীল করতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর চার প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর আরও ছয় কোটি পিস ডিম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে এসব ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।