সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার:
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এখন আলোচনা চলছে নতুন কমিটিতে নেতৃত্বে আসবে কারা। তবে আবাসিক হলের নেতৃত্বদের মধ্য থেকে একটি পদে একজন বের হতে পারে বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র। এর মধ্যে আলোচনায় এগিয়ে আছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম, বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি কাব্বিরুজ্জামান রুহুল ও হবিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু। তবে এদের মধ্যে দুই নেতার বিরুদ্ধে আছে একাধিক অভিযোগ। সোহরাওয়ার্দী হলের সাধারণ সম্পাদক নাঈমের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীকে নির্যাতন ও শিবির ট্যাগ দিয়ে হত্যার হুমকি, সিট বাণিজ্য, হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার মতো একাধিক অভিযোগ আছে। অপরদিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপুর বিরুদ্ধে হল পরিবর্তন করে নেতা হওয়া, সিট বাণিজ্য ও সিট থেকে শিক্ষার্থীকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের এক ছাত্রকে হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলামসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে হল প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে সেই অভিযোগের সত্যতা মিলে এবং নাঈমসহ আরও একজনের ছাত্রত্ব বাতিলসহ ৪ দফা সুপারিশ করা হয়। তবে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগে থেকে তাকে শোকজও করা হয়।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম কৃষ্ণ রায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এরপর গত জুন মাসে ছাত্রলীগের এক দলীয় কর্মসূচিতে না যাওয়ায় হলের দুই শিক্ষার্থীর বিছানাপত্র নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে হলের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জোনায়েদ আহমদ ও একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেন। জোনায়েদ ৩৫১ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং জোবায়েদ প্রাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ওই কক্ষে থাকেন।
এছাড়াও এই নেতার বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্যের একাধিক অভিযোগ আছে। অপরদিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপুর বিরুদ্ধে আছে একাধিক অভিযোগ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী। নেতা হওয়ার জন্য পরিবর্তন করেছেন আবাসিক হল ও থেকেছেন একাধিক হলে। এছাড়াও রয়েছে সিট বাণিজ্য ও তার নিজের তৈরি লিস্টেড সিট থেকে শিক্ষার্থীকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের হল সম্মেলনের আগে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে শাখা ছাত্রলীগের ৪ নেতা-কর্মী হল পরিবর্তন করে। তারা হলেন, হবিবুর হলের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু, শেখ কামাল বিন হারুন, বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি কব্বিরুজ্জামান রুহুল ও সাধারণ সম্পাদক আলফাত সায়েম জেমস। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অপুকে বঙ্গবন্ধু হল থেকে শহীদ হবিবুর রহমান হল, কামালকে শাহ মখদুম হল থেকে সৈয়দ আমীর আলী হল, রুহুলকে শহীদ শামসুজ্জোহা হল থেকে বঙ্গবন্ধু হল এবং জেমসকে শহীদ হবিবুর রহমান হল থেকে বঙ্গবন্ধু হলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
গত বছরের এপ্রিল মাসে মাদার বখশ হলের এক শিক্ষার্থীকে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হল ছাত্রলীগের সভাপতি প্রিন্সের অনুসারিদের ওপর। তবে এ ঘটনায় অন্য হল থেকে এসে ভুক্তভোগীকে ডেকে নেন হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু এবং তার কাছে টাকা দাবি করেন। পাশাপাশি বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে হল ছাত্রলীগের সভাপতি প্রিন্সের অনুসারিরা তাকে সিট থেকে নামিয়ে দেয়। অন্য একটি ছেলেকে বেডে তুলে দেন। অবশ্য হল নেতা হওয়ার আগে মাদার বখশ হলেই থাকতেন অপু। ওই সময়ও তার বিরুদ্ধে সিট বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল।
সানশাইন/সোহরাব