মঙ্গলবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৩ ইং, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বং।
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলা সরকারী খাদ্যগুদামে ভালো চাল কালোবাজারে বিক্রি করে নিম্নমানের চাল ঢুকানোর অভিযোগ উঠেছে। ওই খাদ্যগুদামে চাল ঢুকানোর একটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, উপজেলা খাদ্যগুদাম (ভারপ্রাপ্ত) খাদ্য কর্মকর্তা এল এসডি বাচ্চু মিয়ার যোগদানের পর থেকে নানা কৌশলে দারোয়ান মোয়াজ্জেম হোসেন জুযেল এবং গোডাউন শ্রমিকদের সর্দারের মাধ্যমে এমন দুর্নীতি-অনিয়ম চলছে। তাদের যোগসাজসে রাতের আধারে ভালো চাল স্থানীয় কালো বাজারীর কাছে বিক্রি করে এ অসাধু কর্মকর্তা মানহীন চাল খামালে মজুদ করছেন। ভিডিও ফুটেজ সাংবাদিক হাতে এসেছে।
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে ১২ এবং ১৩ সেম্পেম্বর রাতে সরকারি নিয়ম উপেক্ষা রাতের গুদামঘর খুলে বাচ্চু মিয়া লুঙ্গী পড়া অবস্থায় তড়িঘড়ি করে শ্রমিকদের দিয়ে গুদামের খামাল ভেঙ্গে ভেতরে ভালো চালের পরিবর্তে নিম্নমানের চালের বস্তা খামালের মাঝখানে ঢুকাচ্ছেন।
এছাড়া (ভারপ্রাপ্ত) খাদ্য কর্মকর্তা এল এসডি বাচ্চু মিয়া বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় ১৫ কেজি টাকা দরে নিম্ন আয়ের মানুষ ২ কেজি চাল কম পাওয়ার অভিযোগও আছে। এমনকি একদিকে চাল নিম্ন মানের এবং অন্যদিকে সরবরাহ ৩০ কেজির পরিবর্তে প্রতিটি বস্তা ২৮ কেজির হয়। এমন অভিযোগ মোঃ রবিউল ইসলামসহ অধিকাংশ ডিলারের। নিন্মমানের এসব চাল নিতে আসা অনেকেই সরকারকে দোষারোপ করতে করতে বাড়ি ফিরছেন। আবার অনেকে এসব চাল নিয়ে নিজে না খেয়ে কমদামে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এবিষয়ে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা এল এসডি বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘এই গুদামে সবই ভাল আছে। আমার বিরুদ্ধে কে বা কারা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর ডিলারগণ টাকা দিয়ে খারাপ চাল নিবেন কেন? এছাড়াও ওজনে কম দেয়ার প্রশ্নই আসে না’। রাতে গুদামে চাল ঢুকানোর বিষয়ে বলেন, অনেক সময় রাতেও জেলার বাইরে থেকে চাল আসে। সেগুলোতো রাতেই ডেলিভারি নিতে হয়। চলতি মাসের ১২ ও ১৩ তারিখের রাতে চাল ঢুকানোর বিষয়ে বলেন, রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে হবে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নুরুন্নবী মোবাইল ফোনে জানান, ‘বিষয়টি সঠিক নয়। রাতে বস্তা পরিবর্তন হচ্ছে কিনা-তদন্তের বিষয়। চালের মান খারাপ এ বিষয়ে কোন ডিলার আমার কাছে অভিযোগ করেননি’।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) ওমর ফারুক সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমি অবগত হয়েছি। পাশাপাশি এও শুনেছি-তসলিম নামের একজন শ্রমিক সরদারকে কাজ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সে ভুল তথ্যদিয়ে বিভ্রান্ত করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে, নিম্নমানের চাল মজুদের অভিযোগে চলতি মাসেই ময়মনসিংহ ও বগুড়ার জেলার শান্তাহার সিএসডি’র (সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো) ৪টি গুদাম সিলগালা করেছে খাদ্য অধিদফতর। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের নির্দেশে এসব ঘটনা তদন্তে একটি কারিগরিসহ মোট ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও জানা গেছে, ধীরগতিতে সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা ও নিম্নমানের চাল কেনায় ক্ষুব্ধ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। নিম্নমানের চালের খবর পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কঠোর নির্দেশনাও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
খাদ্যমন্ত্রী এক বক্তব্যে বলেন, ‘আপনারা আগে কি কি করেছেন তা আমি দেখতে চাই না, জানতেও চাই না। এখন থেকে সবাই দায়িত্ব বুঝে কাজ করবেন। কেউ দুর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিলে বিপদে পড়বেন, কেউ রেহাই পাবেন না।’