বুধবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
আক্কেলপুর প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিগত দুই মাসে সেচ প্রকল্পের ১৮ টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি ব্যহত হচ্ছে কৃষকের ফসল উৎপাদন। এধরণের চুরির ঘটনায় সেচ প্রকল্পের মালিকরা শঙ্কিত হয়ে রাত্রি যাপন করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দূর্বৃত্তরা বৈদ্যুতিক খুটির উপর থেকে ট্রান্সফরমার নামিয়ে ট্রান্সফরমারের খোলস রেখে ভেতরের তামার কয়েল চুরি করে নিয়ে যায়।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৮টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। যার সর্বমোট মূল্য ১১ লক্ষ ৭৯ হাজার ৪০২ টাকা বলে দাবী করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
ট্রান্সফরমারগুলো ৯ জুলাই তিলকপুর ইউনিয়নের আমানপুর ও বাগিড়বাড়িয়া গ্রাম থেকে ১৫ কেভিএ ১টি, ১৪ জুলাই রায়কালী ইউপির তেমারিয়া গ্রাম থেকে ১০ কেভিএ ৩টি, ১৮ জুলাই সোনামুখী ইউপির দক্ষিণ রামশালা থেকে ৫ কেভিএ ১টি এবং রামশালা থেকে ১০ কেভিএ ১টি, ১৫ আগস্ট চকরঘুনাথ গ্রাম থেকে পল্লী বিদ্যুতের ১০ কেভিএ ৩টি এবং বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ১০ কেভিএ ৩টি, ২০ আগস্ট উপজেলার তিলকপুর ইউপির ঘোলকুড়ি গ্রাম থেকে ১০ কেভিএ ৩ টি এবং একই ইউপির মির্জাপুর গ্রাম থেকে ১০ কেভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩ টি সহ সর্বমোট ১৮টি ট্রন্সফরমার চুরি হয়েছে।
এসকল ট্রান্সফরমারের ভেতরে ১৮ থেকে ২৪ কেজি পর্যন্ত তামার কয়েল থাকে। এধরনের ঘটনায় কয়েলগুলো চুরিই মুল উদ্দেশ্য থাকে। চুরির ঘটনায় সেচ প্রকল্পের গভীর নলকুপ মালিকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি শঙ্কিত রয়েছে। তাছাড়া কৃষকদের সেচ কার্যক্রম ব্যহত হওয়ায় ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অধিকাংশ চুরির ঘটনায় আক্কেলপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভিকনী গ্রামের আক্কেলপুর-বগুড়া সড়কের পাশ থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় একটি ট্রান্সফরমার উদ্ধার করে আক্কেলপুর থানা পুলিশ।
কয়েকজন ভাংগারি ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তামার তার প্রকার ভেদে কেজি প্রতি ৮শ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা হয়।
সেচ প্রকল্পের নাজমুল হোসেন নামের এক অপারেটর বলেন, ‘এ ধরণের চুরি রোধে ট্রান্সফরমার পাহারা দেওয়ার মতো কোন লোকবল সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পাহারা দেওয়া হচ্ছে। ট্রান্সফরমার চুরি হলে আমাদের অনেক টাকার ক্ষতি এবং সেচ প্রদানে বাধা পেতে হয়’।
এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আক্কেলপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তা প্রকৌশলী মনছুর আলী সরদার বলেন, ‘ট্রান্সফরমার চুরি রোধে আমরা সকল সেচ প্রকল্পের অপারেটরদের পাহারা দেওয়ার জন্য বলেছি। যদি পাহারা দিতে সমস্যা হয় তাহলে বৈদ্যুতিক খুটি থেকে নামিয়ে হেফাজতে রাখতে হবে।
তাছাড়া প্রতিটি সমন্বয় সভায় এই বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়েছে। চুরির ঘটনাগুলোতে তাৎক্ষনাত থানায় মামলা করা হয়েছে। আমরা চুরি রোধে সজাগ অবস্থানে আছি’।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম আব্দুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় থানায় মামলা হয়। এ বিষয়ে আমরা গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে সচেতন করছি। ট্রান্সফরমার চুরি বিষয়ে আমরাও শঙ্কিত’।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দীক বলেন, ‘ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। চুরি রোধে আমরা তৎপর আছি। পাশাপাশি মালিকদের নিয়মিত সচেতন করা হচ্ছে। তাছাড়া টহল পুলিশ এবং গ্রাম পুলিশ সদস্যরাও সজাগ রয়েছে। প্রকৃত অপরাধী সনাক্তে আমাদের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে’।