শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
বাঘা প্রতিনিধি:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাওয়া ও কোচিং নির্ভরশীল হওয়ার ইস্যু নিয়ে শিক্ষকদের ভালো গান গাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন বাঘা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ.ফ.ম মাহামুদুল হাসান। সোমবার (১১সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইন শৃংখলা , মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন, চোরাচালান প্রতিরোধ ও নাশকতা প্রতিরোধ বিষয় নিয়ে পৃথক চারটি মাসিক সভায় বক্তারা মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমে যাওয়া ও লেখা পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে শিক্ষা অফিসার তাঁর বক্তব্যে এ কথা বলেন।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোকপাতের এক পর্যায় কয়েকজন বক্তা বলেন, বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখা-পড়ার মান ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন বিদ্যালয় সমূহে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত অনেক কমে গেছে। এর কারণ হিসাবে বক্তারা শিক্ষার্থীদের কোচিং বানিজ্যে ও ভিডিও গেমে আসক্তের কথা উল্লেখ করেন। এ সময় উক্ত সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এই সমস্যা সমাধানের কারণ জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, আমার শিক্ষকরা যে একে বারে খারাপ পড়ায় তা নয়। তবে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে শিক্ষকদের ভালোগান গাওয়া শিক্ষতে হবে। তাঁর এ ধরনের বক্তব্যে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অপর দিকে মাদক,চোরাচালন ও বিকাশ হ্যাক নিয়ে অনেকের মুখ থেকে বক্তব্য উঠে এলে বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ এর (প্রতিনিধি) থানার উপ-পরিদর্শক কামরুজ্জামান বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার কারনে মাদকের প্রবনতা বেড়েছে। আমরা গত একমাসে থানায় ৩৩ টি মামলা রেকড করেছি। এর মধ্যে ২৫ টি মাদক। এ সমস্ত মামলায় আমরা ২৭ জন আসামী আটক সহ ২৪১ বোতল ফেন্সিডিল, ৪৯৭ পিচ ইয়াবা এবং ১ কেজি ৬ শ’ গ্রাম গাঁজা -সহ ৩৩ গ্রাম হেরোইন জব্দ করেছি। আর চলতি মাসের ১০ দিনে পৃথক অভিযানে চারজন আসামী সহ ৪৫০ পিচ ফেন্সিডিল জব্দ করেছি।
অপর দিকে সীমান্তরক্ষী বি.জি.বি কম্পানী কমান্ডার সুবেদার রফিক হোসেন বর্তমানে মাদকের প্রবনতা বাড়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ উপজেলায় দু’টি বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে আলাইপুর ক্যাম্প থেকে ১৯ বোতল বিদেশী মদ এবং ১৬ পিচ ফেন্সিডিল সহ থানায় পরিত্যাক্ত দুটি মামলা দেয়া হয়েছে। প্রক্ষান্তরে মীরগঞ্জ ক্যাম্প থেকে ১৯ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার দেখিয়ে একটি পরিত্যাক্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ সময় সভার সভাপতি জানতে চান, মামলার সংখ্যা এতো কম এবং আসামী আটক নেই কেন ? এ প্রশ্নের উত্তরে বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, আমাদের লোকবল সংকট এবং ভারি অস্ত্র নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়া যায়না। তাই আসামী আটক করা সম্ভব হয়নি। এমন উত্তোরে অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ হন এবং অসন্তোশ প্রকাশ করেন।
সকাল ১১ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত উক্ত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এড: লায়েব উদ্দিন লাভলু, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) জুয়েল আহাম্মেদ, বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলী, বাঘা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা খাতুন লতা, পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহাম্মেদ রঞ্জু , মোজাহার হোসেন মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নছিম উদ্দিন, বাঘা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আব্দুল লতিফ মিঞা ও সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তাগণ, শিক্ষক মন্ডলী, জনপ্রতিনিধি ,রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
আয়োজিত পৃথক চারটি সভায় বক্তারা, মাদক, সুদের ব্যবসা, হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়, গণহারে যে কোন বিষয় নিয়ে মাইকিং, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ, দ্রব্য মুল্যের বাজার মনিটরিং , যানজট নিরসন, শিক্ষার্থীদের ভিডিও গেমে আসক্ত, ইমো-বিকাশ হ্যাকিং, প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্য , ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন।
এদিকে পৃথক চারটি সভার সভাপতি ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার বলেন, আজকের সভায় অনেক গুরুত্বপূর্ন কিছু বিষয় উঠে এসছে। পর্যায় ক্রমে সব গুলোয় দেখভাল করা হবে। তিনি নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাঘা থানা পুলিশ-সহ উপস্থিত সকলের সহোযোগিতা কামনা করেন।
সানশাইন/সোহরাব