রবিবার, ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: রাজধানীর বিভিন্ন থানাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০টির বেশি মামলা মো. মজিবুর রহমান আকন্দের (৪৯) বিরুদ্ধে। এর মধ্যে তিনটিই হত্যা মামলা। শনিবার মিরপুরের কাফরুল থানা এলাকার সেনপাড়া পর্বতা বিআরটিএ অফিসের পাশ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় লোহার তৈরি দেশীয় ওয়ান শুটার গান।
পুলিশ বলছে, গ্রেফতার মজিবুর রহমান আকন্দ একজন দুর্র্ধষ অপরাধী। রাজধানী ও আশপাশে, বিশেষ করে সাভার ও আশুলিয়ার বেরিবাঁধ এলাকায় দীর্ঘদিন ডাকাতির কাজ করে আসছিল। সে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। সেই গ্রুপের আরও পাঁচ থেকে সাত জন সদস্য আছে। তারা প্রত্যেকেই ডাকাতির পাশাপাশি ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করে আসছিল।
বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছে, সম্প্রতি রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াটে খুনিদের তৎপরতা বেড়েছে। অর্থের বিনিময়ে তাদের দিয়ে হত্যা করানো হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ইজারাদার এবং বিরোধপূর্ণ জমি-জমায় সংশ্লিষ্টরা প্রতিপক্ষদের দমাতে এসব ভাড়াটে খুনিদের ব্যবহার করছে।
কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তারেক আহমেদ, সোহেবুর রহমান ও মারুফ হোসেন এবং সহকারী উপপরিদর্শ (এএসআই) সুদীপচন্দ্র বিশ্বাসের যৌথ অভিযানে মজিবুর রহমান আকন্দকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দিয়েছে কাফরুল থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে মজিবুর। কারাগার থেকে বেরিয়ে থেমে থাকেনি তার অপরাধ কার্যক্রম। আবারও জড়িয়ে পড়ে ডাকাতিসহ হত্যার কাজে।
আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, বালু মহল পরিচালনাকারী ব্যক্তি এবং জমি-জামা সংক্রান্ত বিরোধের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ভাড়াটে খুনি হিসেবে মজিবুর রহমানকে ব্যবহার করে আসছিল উল্লেখ করে কাফরুল থানার এসআই তারেক রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে, যারা তাকে কন্টাকের কাজ দিয়েছে। সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
অস্ত্রের উৎস জানাতে গিয়ে গ্রেফতারকৃত মজিবর পুলিশকে জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে সে সঙ্গে কখনও অস্ত্র বহন করতো না। যখনই কোনও কাজ পেতো, তখনই মাহবুব নামে এক ব্যক্তি তাকে অস্ত্র সরবরাহ করতো। কাজ শেষ হলে অস্ত্রগুলো তার চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে রেখে দিতো। এভাবেই তার কাছে প্রতিনিয়ত আসতো অস্ত্র।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কিলাররা চাইলেই তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে অস্ত্র। আর এসব অস্ত্র দিয়েই প্রতিনিয়ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। ঢাকা জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকা জেলা পুলিশের অভিযানে একটি ওয়ার্কশপ থেকে অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেখান থেকে তৈরি অস্ত্র কাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
অস্ত্র ব্যবহার করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত থাকবে, তাদেরই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, অস্ত্রসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সবসময় তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যখনই কোথাও অস্ত্র ব্যবহার করার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তখনই গোয়েন্দা তথ্য বাড়িয়ে সেসব অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে এবং অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।