সর্বশেষ সংবাদ :

রাণীনগরে গরু ধর্ষণের বিচারের নামে ৬৪ হাজার টাকা গ্রাম পুলিশ ও মাতব্বরদের পকেটে!

রাণীনগর প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগরে এক গরুকে ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের নামে অভিযুক্তের কাছ থেকে ৬৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গ্রাম পুলিশ ও মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। সালিশের নামে ঘুসের টাকাগুলো গ্রাম পুলিশ, মেম্বার ও মাতব্বরসহ ৭ জনের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের গিরিগ্রাম গ্রামে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে অর্থ নয় ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চান গরুর মালিক।

 

 

 

 

সম্প্রতি উপজেলার গিরিগ্রামে একটি পুকুর পাড়ে বেঁধে রাখা এক গরুকে বাঁশঝারে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠে ওই গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে মোফাজ্জল প্রামানিক (৪০) এর বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনাকেই পুঁজি বানিয়ে গ্রাম্য সালিশে অভিযুক্তের পক্ষে রায় এনে দেওয়া এবং প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রাম পুলিশ, মেম্বার ও মাতব্বররা অভিযুক্তের কাছ থেকে ৬৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। জানা গেছে, গত ৯ আগস্ট ওই গ্রামের এক বিধবা নারী তার একটি গরু বাড়ির পাশে পুকুরপাড়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে বাড়িতে চলে আসেন। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে তার গরুটি নিয়ে আসতে গেলে তিনি দেখতে পান পুকুরপাড়ে বাঁশঝারের ঝোপে গরুটিকে ধর্ষণ করছেন মোফাজ্জল। এরপর গরুর মালিকের চিৎকারে মোফাজ্জল সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

গরুর মালিকের ছেলে আজিজুল জানান, তার মা ঘটনাটি তাৎক্ষণিক প্রতিবেশী এবং মাতব্বর কয়েকজনকে জানায়। এরপর গ্রামে সন্ধায় সালিশ হয়। সালিশে অভিযুক্ত মোফাজ্জল ঘটনাটি অস্বীকার করেন। এ সময় মাতব্বররা স্বাক্ষীদের কাছ থেকে শুনেও ঘটনাটি মানে না। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হট্টোকল বাঁধে। এতে সালিশ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবারও একদিন সালিশে বসা হয়। ওই সালিশে গ্রাম পুলিশ শাজাহান, মাতব্বর রুবেল, আলম, গোলাম, হামিদুল, মিঠু ও মেম্বার শাজাহান বসেন।  তিনি আরও জানান, সালিশে গ্রাম পুলিশ শাজাহান, মাতব্বর রুবেল ও আলমের নেতৃত্বে অভিযুক্তের পক্ষে রায় করে দেওয়ার অজুহাতে অভিযুক্তের কাছ থেকে রুবেল ১৪ হাজার এবং আলম ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে মাতব্বর ৭ জনের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। এরপর সালিশে মাতব্বররা নানান অযুহাতে ন্যায় বিচার না করে আমাদেরকেই হুমকি ও দোষারোপ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন এবং এই ঘটনা অন্য কাউকে বলতে নিষেধ করেন তারা।

 

 

 

 

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ধর্ষণকারী মোফাজ্জল প্রামানিক বাড়ি থেকে পলাতক থাকায় এবং মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সালিশে অভিযুক্তের পক্ষে রায় নিয়ে এসে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে মাতব্বর আলম বলেন, টাকা নিয়েছিলাম, ভাগও হয়েছিল। পরে গ্রামের লোকজন জানাজানি হলে গ্রামের এক ব্যক্তির হাতে আমরা সব টাকা দিয়ে দিয়েছি বলে দাবি করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রাম পুলিশ শাজাহান বলেন, আত্মীয় হওয়ার সুবাধে মোফাজ্জলের পরিবারের লোকজন আমার কাছে এসে বিষয়টি মিমাংসা করে দেওয়ার জন্য বলে। আমি তাদের গ্রামের মাতব্বরদের বলতে পরামর্শ দিই। পরে বিষয়টি গ্রামে বসে মিমাংসা হয়। টাকা নেওয়ার বিষয়ে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার কাছে যে টাকা এসেছে, সেটা আমি ফেরত দিতে প্র¯‘ত আছি।

ইউপি সদস্য শাজাহান আলী বলেন, গ্রামের কয়েকজন বৈঠকে আমাকে ডেকেছিল। তাই সেখানে গিয়েছিলাম। ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় আমি বৈঠক থেকে চলে আসি। আর অভিযুক্তের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুস নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। আরেক মাতব্বর রুবেল বলেন, আমাকে ১৪ হাজার টাকা দিয়েছিল। ওই টাকা ৩ জনের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি। এছাড়া সালিশে বসা এবং টাকা ভাগ করে নেওয়া অন্যান্য মাতব্বরদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে রাণীনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। কেউ থানায় কোন অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৩ | সময়: ৬:০৯ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine

আরও খবর