রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্পোর্টস ডেস্ক: প্রথমার্ধে সেই চেনা দৃশ্য। আবারও লিওনেল মেসির অসাধারণ গোলে এগিয়ে গেল ইন্টার মায়ামি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে গোল শোধ করে দিল ন্যাশভিল। ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানেও প্রথম শটে যথারীতি গোল মেসির। কিন্তু এরপর আর টাইব্রেকার শেষই হয় না! শট নিতে হলো দুই দলের সবাইকেই। সেখানে শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি মেসিদেরই।
লিগস কাপের ফাইনালে রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে ন্যাশভিল এসসিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন মেসির ইন্টার মায়ামি। বাংলাদেশ সময় রোববার সকালে ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় ১-১ সমতায়। এরপর টাইব্রেকারে মায়ামি জিতে যায় ১০-৯ গোলে। টাইব্রেকারে ন্যাশভিলের দ্বিতীয় শটটি ঠেকিয়ে দেন মায়ামির গোলকিপার ড্রেক ক্যালেন্ডার। পঞ্চম শটে গোল করলেই জিতে যেত মায়ামি। কিন্তু মায়ামির মেক্সিকান ফুটবলার ভিক্তর উজোয়ার শট আটকে দেন ন্যাশভিলের গোলকিপার এলিয়ট পানিকো।
টাইব্রেকার চলতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত একাদশ রাউন্ডে গোল করেন মায়ামির গোলকিপার ক্যালেন্ডার। এরপর তিনি ঠেকিয়ে দেন প্রতিপক্ষ গোলকিপার পানিকোর শট। শিরোপার উল্লাসে মেতে ওঠে মায়ামি। শুধু টাইব্রেকারেই নয়, গোটা ম্যাচেরই নায়ক বলা যায় ক্যালেন্ডারকে। গোটা ম্যাচে ৫টি দারুণ সেভ করেন মায়ামির এই গোলকিপার।
তবে টুর্নামেন্টের নায়ক তো একজনই। যে দল টানা ১১ ম্যাচ ছিল জয়বিহীন, সেই মায়ামিই মেসি আসার পর লিগস কাপের শিরোপা জিতে গেল রূপকথাময় পথচলায়। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটির প্রথম বড় ট্রফি এটি। ভেঙে যায় ন্যাশভিলের প্রথম বড় ট্রফির স্বপ্ন। যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর দলগুলিকে নিয়ে আয়োজিত হয় এই লিগস কাপ। এবারের আসরে অংশ নিয়েছে ৪৭ ক্লাব। ফাইনাল খেলে যুক্তরাষ্ট্রেরই দুই ক্লাব।
প্রথম ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে নেমে শেষ সময়ে ফ্রি কিকে দুর্দান্ত গোলে দলকে জিতিয়ে মেসির শুরু। এরপর আর থামাথামি নেই। গোল করলেন টুর্নামেন্টের প্রতি ম্যাচেই। আসর শেষ করলেন তিনি ৭ ম্যাচে ১০ গোল করে। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার তিনি। আসরের সেরা ফুটবলারের পুরস্কারও ওঠে তার হাতেই।
টুর্নামেন্টে আগেও একটি ম্যাচে টাইব্রেকারে জিতেছিল মায়ামি। তবে বড় পরীক্ষায় পড়তে হয় তাদের ফাইনালে। আসরে প্রথমবার নির্ধারিত সময়ে একাধিক গোল করতে ব্যর্থ হয় তারা। তবে তুমুল লড়েও শেষ পর্যন্ত পেরে উঠল না ন্যাশভিল। ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিটে দাপট ছিল ন্যাশভিলেরই। কিন্তু গোল আদায় করতে ব্যর্থ হয় তারা। উল্টো ২৩তম মিনিটে পিছিয়ে পড়ে দলটি। প্রথম বল পেয়েই চোখধাঁধানো গোল করেন মেসি।
রবার্ট টেইলরের কাছ থেকে বক্সের একটু বাইরে বল পান আর্জেন্টাইন জাদুকর। এরপর এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে এগিয়ে যান একটু। তার সামনে তখন ছাতার মতো ঘিরে তিন ডিফেন্ডার। তাদেরকে সুযোগ না দিয়ে প্রায় ২০ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের এক গোলা ছোড়েন। চোখের পলকে বল আশ্রয় নেয় জালে। গোলকিপার লাফিয়েও পাননি নাগাল। ধারাভাষ্যকার তখন চিৎকার করছেন, “মেসিইইইই… অবিশ্বাস্য…।”
প্রথমার্ধে আর গোল হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বাদশ মিনিটে কর্নার থেকে ফাফা পিকু গোল করে সমতায় ফেরান ন্যাশভিলকে। এরপর দুই দলই আক্রমণ করে বেশ। ৭০তম মিনিটে মেসির গড়ানো শট বাধা পায় পোস্টে। ৭৭তম মিনিটে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি ন্যাশভিল। শেষ দিকে দুটি সেভ করে মায়ামিকে ম্যাচে রাখেন গোলকিপার ক্যালেন্ডার। একদম শেষ প্রান্তে যোগ করা সময়ে মায়ামিকে প্রায় জিতিয়েই দিয়েছিলেন লিওনার্দো কাম্পানা। কিন্তু তার শট লাগে ক্রসবারে।
অতিরিক্ত সময় নেই এই টুর্নামেন্টে। ম্যাচ সরাসরি গড়ায় টাইব্রেকারে। টস জিতে আগে শট নিয়ে মেসি গোল করেন বরাবরের মতোই নির্ভরতায়। এরপর তো রোমাঞ্চ ও নাটকীয়তা শেষে জয় মায়ামির। শেষ সময়ের নায়ক গোলকিপার ক্যালেন্ডারকে ঘিরে বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে ওঠেন সবাই। গ্যালারিতে উল্লাসে ফেটে পড়েন দলের সত্ত্বাধিকারীদের একজন ডেভিড বেকহ্যাম। পরে দলের উদযাপনের মধ্যমণি হয়ে ওঠেন মেসি।