সর্বশেষ সংবাদ :

নির্বাচনকে উসিলা করে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণ চায় আমেরিকা: শেখ হাসিনা

সানশাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য হওয়ার যে তাগিদ দিচ্ছে, মানবাধিকার নিয়ে যে কথা বলছে, তা ছল মাত্র বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আসলে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে বঙ্গোসাগরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। আর তা হলে এই অঞ্চল হয়ে উঠবে অস্থিতিশীল।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের তৎপর হয়ে ওঠার মধ্যে বুধবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় একথা বলেন শেখ হাসিনা।
গত মে মাসে যুক্তরাজ্য সফরের সময় শেখ হাসিনা বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়ত তাকে ক্ষমতায় চায় না বলেই বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এরপর আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী বাম দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সংসদে বলেছিলেন, ঢাকাকে বাগে আনতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। তারা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র সম্প্রতি বলেছিলেন, “আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করি এবং সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপ নেওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের আলোচনায় আমরা কখনও যুক্ত হইনি।”
তবে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য খোলসা করতে গিয়ে একই কথা তুললেন।
তিনি বলেন, “আমেরিকার উদ্দেশ্য বাংলাদেশে নির্বাচন না, এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র না। আমাদের গণতন্ত্রের নাম দিয়ে, নির্বাচনের নাম দিয়ে, নানা নাম দিয়ে এদেশে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগরের জায়গাটা ব্যবহার করতে পারে।
“এটা ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা এবং দেশগুলোকে ধ্বংস করা, এটাই হচ্ছে কারও কারও উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্য নিয়েই তাদের এত টালবাহানা। এই এলাকাটাকে নিয়ে নানাভাবে খেলার চক্রান্ত চলছে।”
গত এক যুগে আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনায় প্রভূত উন্নতির দিকটি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এরা বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়।
“পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩০ বছর ধরে যেটা সংঘাত ছিল, আমি সরকার আসার পর সেখানে আমি শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানে এখন নানা রকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্ট চলছে। যেহেতু আমি জানি, আমি বুঝি, আমাকে কীভাবে ক্ষমতা থেকে সরাবে। তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, তাদেরকে বসিয়ে এ জায়গাটা নিয়ে খেলবে, এটাই তাদের প্রচেষ্টা।”
দেশপ্রেমিক নাগরিকদের এই বিষয়ে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের ক্ষতি করে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করি না।”
অগণতান্ত্রিক শক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সে দেশের নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আমেরিকায় যখন গিয়েছিলাম, তখন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনারা তাদেরকে সাপোর্ট দেন কীভাবে? আপনাদের গণতন্ত্র কি আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত থাকে? আটলান্টিক পার হলেই আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি বদলে যায়?
“একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের দেশে এত নেতা-কর্মীদেরকে হত্যা করল, শুধু একবার নয় বারবার আমাদেরকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। আজকে তাদেরকেই ক্ষমতায় বসাতে হবে?”
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “যেসব দেশ খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, তারা যখন মানবাধিকারের কথা বলে, নির্বাচনের কথা বলে, স্বচ্ছতার কথা বলে ৃ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে খুব উতলা হয়ে পড়েছে!
“তাদের কাছে আমার প্রশ্ন-২০০১ সালের নির্বাচনে যখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার করা হল, কত মানুষকে খুন করেছে, হাত কেটে, চোখ তুলে নিয়েছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, পুড়িয়ে ফেলেছে, তখন তাদের কথা হয়নি কেন? সেই নির্বাচনটা আমাদের হারার কথা না, আমাদেরকে জোর করে হারান হয়েছে।”
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বিচার পাওয়া নিয়ে লড়াইয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আজকে তাদের কাছ থেকে মানবাধিকারের কথা আমাদের শুনতে হয়! আমাদের মানবাধিকার তখন কোথায় ছিল?”
পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ‘ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন’ বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “যারা আমাদের বাড়িতে ওঠাবসা করেছে, খাওয়া-দাওয়া করেছে, তারাই বেইমানি করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মোশতাক নিজে ক্ষমতায় বসে জিয়াউর রহমানকে বানালো সেনাপ্রধান। এই ঘটনার সঙ্গে জিয়াউর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
“মীরজাফর বেঈমানি করে তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। মোশতাকের বিদায় আর জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় বসেন। একদিকে সেনাপ্রধান আবার রাষ্ট্রপতি! এই দুই পদ সংবিধান লঙ্ঘন করে, সেনাআইন লঙ্ঘন করে। ইনডেমনিটি দিয়ে খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করে।”
জিয়া ক্ষমতা দখলের পর নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছিল দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “মার্শাল ল জারি প্রতি রাতে কারফিউ। স্বাভাবিক চলাফেরার অধিকার পর্যন্ত মানুষের ছিলো না। মত প্রকাশের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। সেনাবাহিনীর হাজার হাজার সৈনিক অফিসারকে হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান।”
জিয়ার পর এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসন পেরিয়ে খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এল জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে। জামায়াতের উত্থান জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে, কারণ জামায়াত ছিল যুদ্ধাপরাধী।”
১৫ অগাস্ট শোকের দিনে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “ক্ষমতায় এসেই খালেদা জিয়ার আসল রূপ বের হল। ১৫ অগাস্ট যে দিনে আমরা শোক পালন করি, সেই দিন হয়ে গেল তার জন্মদিন, একটা মিথ্যা জন্মদিন।
“কারণ সে কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারবে না যে তার জন্মদিন ১৫ অগাস্ট। এতগুলো মানুষ যেখানে নির্মভাবে হত্যা হয়েছে, সেটাকে সে উৎসব হিসেবে নিল! তার অনেক পা চাটা দল বড় বড় কেক বানিয়ে নিয়ে সেখানে যেত, এই ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ আমরা দেখেছি। কত বড় বিকৃত মানসিকতা থাকলে এরকম করতে পারে, আপনারা চিন্তা করে দেখেন।”
এখনকার জোটসঙ্গী দল জাসদের বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতার করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “সেই সময় ছাত্রলীগ ভেঙে জাসদের সৃষ্টি হয়। জাসদের সঙ্গে এরাই (বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি) যুক্ত হয়ে যায়।
“জাতির পিতা যতদিন বেঁচে ছিলেন, জাসাদের বড় বড় মিটিংয়ে টাকা-পয়সার অভাব হত না। জাতির পিতাকে হত্যার পর তাদের গুরুত্ব কমে গেল। তখন তাদের লোকও নেই, অর্থও নেই। কারণ তখন রাজাকাররা সুযোগ পেয়ে গেছে।”
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনায় ছিলেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম।


প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ