শুক্রবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: প্রায় পনের বছর ধরে দেশের শাসন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে যত উন্নয়ন হয়েছে, সেসব তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ দল কেবল জনগণের কাছেই ‘দায়বদ্ধ’ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, “আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নেই।’’ রোববার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের প্রায় তিন হাজার নেতা এবং জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে এই বিশেষ বর্ধিত সভা করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতিটি শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য আওয়ামী লীগই কাজ করেছে। আগে অন্য কেউ কোনদিন মানুষের কথা ভাবেওনি, কিছু করেওনি। সেই কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমরা যে উন্নয়ন করেছি, পরিবর্তন এনেছি সেই তথ্যগুলো আপনারা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন।”
‘গণমানুষের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি’ মন্তব্য করে হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নাই। জনগণই হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রভু। জনগণের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। জনগণের কল্যাণে কাজ করি। নির্বাচনের সময় জনগণের কাছেই আমরা আমাদের দায়বদ্ধতা দিই- কতটুকু করতে পেরেছি, ভবিষ্যতে আমরা কী করব।” আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা এ সভায় অংশ নেন।
এছাড়া জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও। শেখ হাসিনা বলেন, “সকলের জন্য আমরা কাজ করবো এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব।”
এ সময় আওয়ামী লীগকে ‘সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী’ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “২০০৯ সাল থেকে আজকে ২০২৩ সাল এই সাড়ে ১৪ বছরে এই বাংলাদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে, সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে বলে আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পেয়েছে।”
দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। আগামীতে আওয়ামী লীগ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করতে পারলে দেশে দারিদ্র্যের হার আরও কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন। নোবেলজয়ী ড. ইউনুসের প্রতিষ্ঠানকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এক অর্থনীতিবিদ লিখেছেন কোন এক বিশেষ এনজিও ক্ষুদ্র ঋণে দেশে দারিদ্র্য কমেছে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ সরকার গঠন করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে বলেই আজকে আমরা দারিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কোনো বিশেষ এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণে যদি দারিদ্র্য কমে, তবে এই ১৮ ভাগ আগে কেন হয়নি।
“যারা বলে এনজিও ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্য কমেছে, তারা কোন অংকে হিসাব করেন। দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি প্রতিটি কর্মসূচি গণমুখী।” তিনি বলেন, “জনগণকে দারিদ্র্য মুক্ত করা, জনগণের শিক্ষার হার বাড়ানো, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, কর্মসংস্থানের জন্য বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেওয়া, তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলেই এই দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। কোনো এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে দারিদ্র্য হ্রাস পায় নাই।
“উচ্চ সুদে যারা কাজ করবে তারা দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না বরং তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে, ঋণের ওপরই জীবন যাপন করতে হয়। কখনো তাদের আত্মহত্যা করতে হয়েছে, কখনো জমি-জমা সব বেচতে হয়েছে।” আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “২০০১ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল আওয়ামী লীগ। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসি। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, সে কারণে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।”
সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।