সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়ন পরিষদের পাকড়ী উল্টরপাড়া গ্রামের ২নং গভীর নলকূপ অপারেটর আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অনিয়ম ও হয়রানি এবং অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ওই গভীর নলকূপের আওতাধীন ৪৩ জন কৃষক-অপারেটর পরিবর্তন ও বর্তমান অপারেটরের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গোদাগাড়ী জোন-২ এর সহকারী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। কৃষকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগটি করেন ওই গভীর নলকূপের আওতাধীন কৃষক ইসমাইল কাজি। অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালককে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বর্তমান অপারেটরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছেন ৩ নং পাকড়ী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ গোলাম রাব্বানী।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পাকড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ২নং গভীর নলকূপের আওতাধীন কৃষকরা দীর্ঘদিন করে গভীর নলকূপের পানিতে চাষাবাদ করে আসছেন ও মেরামত বাবদ বিভিন্ন খরচ পরিশোধ করেন। কিন্ত গত ২/৩ বছর থেকে বর্তমান অপারেটর নিয়ম না মেনে কৃষকদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে বিদ্যুতের মিটার ভেঙ্গে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন অপারেটর।
লিখিত অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, নলকূপ অপারেটর আশরাফুল ইসলাম স্টাটার মেরামত বাবদ বিঘা প্রতি ২০০ টাকা দাবি করে। নতুন আন্ডারগ্রাউন্ডের আওতাভুক্ত জমির জন্য বিঘা প্রতি ৫০০ টাকা দাবি করে। প্রকৃত স্কীমি জমির পরিমাণ জানাতে অস্বীকার করে। স্কীম বহিভর্’ত জমিতে সেচ দিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কৃষকরা প্রাসঙ্গিক খরচের হিসেব নিতে গেলে দেয়না।
কৃষকরা প্রয়োজনে ফোন করলে কল রিসিভ করে না। অপারেটর ছাড়াও অন্য পেশার সাথে জড়িত থাকায় কৃষকদের সময় দিতে পারে না। অপারেটরের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী কৃষকদের সেচের সময় হয়রানি করে। বিএমডিএ অফিসে কেউ তার বিরুদ্ধে হুমকি দিলে বৈদ্যুতিক মিটার ভেঙ্গে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। অভিযোগগুলো গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে অপারেটর পরিবর্তনের জন্য দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
এদিকে, চলতি বছরের গত জুলাই মাসের ১৩ তারিখ সন্ধ্যা ৬টার দিকে অপারেটরের কাছে ইসমাইল কাজি নামের এক কৃষক খরচের হিসেব চাইলে অপারেটর আশরাফুল সবার উপস্থিতিতেই তাকে হুমকি-ধামকী মারধরের চেষ্টা করে। এ ঘঁনায় ওই কৃষক কাকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাকনহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে শনিবার দুই পক্ষকে ডেকে বসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয় পুলিশ। অপারেটর আশরাফুলকে ভবিষ্যতে এ ধরণের কার্যকলাপ না করার জন্য সতর্ক করা হয়।
আব্দুল্লাহ আল হাদীসহ বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, অপারেটর আশরাফুল নানা ধরণের অনিয়ম করে। কেউ প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধামকি দেয়। আর তাকে সেচ দিতে হয়রানি করে। আমরা বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত অপারেটর আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে অপারেটর হিসেবে দায়িত্বে আছি। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যে। বর্গা চাষীরা এ ধরণের অভিযোগ করে থাকতে পারে। থানায় লিখিত অভিযোগ কেন হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি পরে কথা হবে বলে ফোন রেখে দেন। এ বিষয়ে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গোদাগাড়ী জোন-২ এর সহকারী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল আহসান বলেন, অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি। অভিযোগ দিয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খোঁজ নিয়ে দেখছি। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ রাজশাহীর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ দিয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো কৃষককে হয়রানি করার সুযোগ নেই।